১৫ লাখ দিয়েও ছেলের চাকরি হয়নি শুনে অজ্ঞান বাবা


প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

সত্তর বছর বয়সী ওসমান আলী ছেলের চাকরির আশায় সরকারদলীয় দুই নেতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ১৫ লাখ টাকা। দরিদ্র ওসমান জমি বিক্রি করেই এ টাকা জোগাড় করেছেন।

কিন্তু এ সংক্রান্ত নিয়োগ বোর্ড শেষ হওয়ার পর ওসমান জানতে পারেন তার ছেলের চাকরি হচ্ছে না। এ কথা শোনামাত্রই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

গত সোমবার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ওসমানের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখনও চিকিৎসাধীন তিনি।

বুধবার হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তমা বসাক বলেন, হয়তো কোনো দুঃসংবাদে ওসমান আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। শারীরিকভাবেও তিনি খুব দুর্বল। তবে আশঙ্কামুক্ত এবং বিপি ঠিক আছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ওসমানের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন জানান, ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার বড় ভাই আতাউর রহমানকে দফতরি কাম প্রহরী পদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জাহানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ও শ্রমিক লীগের সভাপতি হাসেম আলী।

কিন্তু চাকরির জন্য তাদের কাছে নগদ টাকা ছিল না। পরে পানেরবরজ ও ফসলি জমি বিক্রি করে তাদের দুজনকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা দেয়া হয়।

গত সোমবার দফতরি কাম প্রহরী পদে নিয়োগ বোর্ড বসে। বোর্ড শেষে আতাউরের চাকরি হয়নি বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর শোনামাত্রই বৃদ্ধ বাবা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান বলে জানান আনোয়ার হোসেন।

চাকরিপ্রার্থী আতাউর রহমানের অভিযোগ, হাসেম আলী ও আবুল হোসেন তাদের দেয়া ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তিনি আক্ষেপ করেন বলেন, এখন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে বেড়ানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। প্রতারণার কারণে বৃদ্ধ বাবা-মাও মরতে বসেছেন।

এ ঘটনায় হাসেম ও আবুল হোসেনের বিচার দাবি করেন আতাউর রহমান।

নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, এ উপজেলার ২২টি স্কুলের নিয়োগ বোর্ড শেষ হয়েছে। আতাউর  রহমান চাকরি পেয়েছেন কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে যারা বিবেচিত হয়েছেন, তাদের বরাবর চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জাহানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। এমপি সাহেব (আয়েন উদ্দিন) বিদেশে আছেন। তিনি ফিরলে বসে বিষয়টি ঠিক করা হবে।

জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ নেতা হাসেম আলীও টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ রকম একটি ঘটনায় ওসমান আলী হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে শুনেছেন। তবে লেনদেন হয়েছে কিনা জানি না।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।