গাজীপুরে লিচু বাগানে লাল-গোলাপী রঙের সাজ


প্রকাশিত: ০৪:৪৯ এএম, ২১ মে ২০১৭

গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার বিভিন্ন গ্রামে লাল ও গোলাপী রঙে সেজেছে লিচুর বাগানগুলো। জৈষ্ঠ্যের রসালো মৌসুমী ফল লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় করছে শ্রীপুরের গ্রামের লিচুর বাগানগুলোতে। চলতি বছর শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া, তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী, মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা, রাজাবাড়ি ও প্রহলাদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে ৭২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

শ্রীপুরে রসালো ফল লিচুর ফলন ভাল হয় ও বাগানগুলোও আয়তনে অনেক বড়। এসব গ্রাম থেকে সংগৃহীত লিচু বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

এদিকে কাপাসিয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে দাম ভালো থাকায় লিচু চাষিরা মহাখুশি। বাজারে কাপাসিয়ার লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায়। কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লিচু কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষা দুর্গাপুর ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামে সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষাবাদ হয়। এ অঞ্চলের ভাওয়াল পরগনার লালমাটির পাহাড় ও লালমাটির সমতল ভূমিতেও লিচুর আবাদ বেশি হয়।

স্থানীয়রা জানায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচু ফলন হয়েছে অনেক বেশি। তাই আমাদের মন এখন অনেক খুশি।

Gazipur

তারা জানান, দেশের উৎপাদিত লিচুর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু ও প্রকৃতির আসল ফ্লেবার যুক্ত কাপাসিয়ার লিচু এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

কাপাসিয়া কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর অন্যান্যবারের তুলনায় আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকায় আবাদ ভালো হয়েছে। এ বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয় এবং উৎপাদন হবে ১৭১০ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকা ও তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামে লিচুর বাগান ঘিরে এক সাজসাজ রব বিরাজ করছে। লিচু নিয়ে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে উৎসব। লিচু ঘিরে এলাকা সর্বত্রই এখন আলোচনা। কে কত টাকার লিচু বিক্রি করেছে। আত্মীয় স্বজনদের পদচারনাও বেড়ে গেছে।

লিচু গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লাল ও গোলাপী রঙের লিচু। গ্রামগুলো যেন সেজেছে গোলাপী রঙে। শ্রীপুরে তিন ধরনের গোলাপী, কদমী ও পাতি লিচুর চাষ হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিটি ভালো মানের লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন টাকায়।

কেওয়া গ্রামের লিচু চাষি আইনুল হক আকন্দ বলেন, লিচু গাছে মুকুল আসার আগেই ভালাে করে যত্ন নিতে হয়। লিচুর ভালো ফলন আশা করতে হলে, মৌসুম শেষের পরেই গাছে জৈবসারসহ বিভিন্ন প্রকারের সার প্রয়োগ করতে হয়। ফুল ফোঁটার আগেই গাছে মগডাল ভেঙে দিয়ে গাছের গোড়ায় সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সবসময় ভিজিয়ে রাখতে হয়।

Gazipur

লিচুর ক্ষতিকারক পোঁকারোধে মুকুল আসা ও কুঁড়ি তৈরির পর বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। গতবারের চেয়ে এইবার লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি।

কেওয়া গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার বাগানের ২৫টি গাছে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার তিনি প্রায় আশি হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের আইনুল হক আকন্দ তার বাগান বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন লাখ টাকায়।

লিচু বাগানের মালিক আলমাস আকন্দ বলেন, প্রতি বছর পাঁচ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করলেও এবার লিচুর ফলন তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে, তবে দাম বেশি পাওয়ায় তিনি বিক্রি করেছেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায়।

টেপিরবাড়ী গ্রামের তারেক মৃধা বলেন, তাদের গ্রামগুলোতে কৃষকরা মূলত লিচু চাষের উপর নির্ভরশীল। সারা বছরই লিচু গাছের যত্ন নেন তারা। এসব গ্রামের উঁচু চালাযুক্ত জমি হওয়ায় অন্যান্য ফসল তেমন হয় না। ফলে আবাদী-অনাবাদী সব জমিতেই লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

টেপিরবাড়ী গ্রামের লিচু চাষি রুহুল আমিন জানান, গ্রামগুলোতে কৃষকরা নিজস্ব পদ্ধতিতে লিচু চাষ করে থাকেন। সরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণ নেই এলাকার লিচু চাষিদের। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লিচু চাষে কৃষক উদ্বুদ্ধকরণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লিচুর উৎপাদন দ্বিগুণ হবে।

লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রীপুরের লিচুর গুণগত মান ভালাে ও রসালো হওয়ায় ঢাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বাগান থেকে সংগৃহীত লিচু ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করে থাকি।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবা সুলতানা বলেন, শ্রীপুর বন্যামুক্ত ও জমি উচু চালা সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত লিচু রসালো ও সুস্বাদু। স্থানীয় ভাবে এবছর থেকে কৃষকদের লিচু চাষে দিক নির্দেশনা দিয়ে ৭২৪ হেক্টর জমিতে লিচু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।

এ জেলার লিচু এখন শুধু সারাদেশেই সরবরাহ হচ্ছে না, দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যেও রফতানি হচ্ছে। সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে রফতানিও হচ্ছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।