জামালপুরে লোকবল সংকটে দুটি রেলস্টেশন বন্ধ


প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ০২ জুন ২০১৭

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ উন্নয়নে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুরের তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় চারটি স্টেশনসহ লিংক রেলপথ। বর্তমানে এই রেলপথ দিয়ে তিনটি লোকাল ট্রেন ছাড়া চলাচল করছেনা কোনো আন্তঃনগর ট্রেন।

ইতোমধ্যে চারটি স্টেশনের মধ্যে দুটি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে লোকবল সংকটে। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলপথটি কোনো কাজেই আসছেনা। উল্টো স্টেশন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়নে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ভুয়াপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের দাবি তুলে এ অঞ্চলের মানুষ। এই প্রকল্পের দাবি আদায়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৎকালীন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন, আলহাজ মতিউর রহমান, সাংবাদিক শফিক জামান, মোস্তফা বাবুল, এম.এ. জলিলসহ এ অঞ্চলের বিশিষ্ট সচেতন ব্যক্তিবর্গ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এ প্রকল্প বাস্তাবায়নে সভা, সমাবেশ, পোস্টারিং ও লেখালেখি করেন।

সেই দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামালপুরে এক জনসভায় তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু লিংক রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দিলে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২০০০ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে এসে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়ে।

আওয়ামীলীগ সরকার আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু লিংক রেলপথের কাজটি পুনরায় গতি ফিরে পায়। এসময় একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় বর্ধিত করে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২টি ব্রিজ-কালভার্ট, ৪টি রেল স্টেশনসহ (অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান স্টেশন, শহীদনগর বারইপটল স্টেশন, হেম নগর স্টেশন এবং ভুয়াপুর স্টেশন) প্রায় ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে।

jamalpur

পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু লিংক রেল লাইন উদ্বোধন করে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেন। এরপর আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেসসহ ৩টি লোকাল ট্রেন তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত নবনির্মিত লাইনে চলাচল শুরু করে। কিন্তু ২০১৪ সালে এসে হঠাৎ করেই এই লাইনে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই এই লাইনে ৩টি লোকাল ট্রেন ছাড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে নবনির্মিত ৪টি স্টেশনের মধ্যে শহীদনগর বারইপটল স্টেশন এবং হেম নগর স্টেশন লোকবল সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেল লাইনটি এ অঞ্চলের মানুষের কোনো কাজেই আসছেনা। আর রেলস্টেশন বন্ধ থাকায় লোকাল ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি শিকার হচ্ছে নানা ভোগান্তির।

তারাকান্দি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রেললাইন তৈরি করা হলো অথচ আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল না করায় এটি আমাদের কোনো কাজেই আসছেনা। তার উপর দুটি স্টেশন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দ্রুত এই লাইনে আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হলে একটা সময় রেলপথটি পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জহুরুল ইসলাম তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্টেশনসহ আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে জানান, সরকার রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করায় খুব শিগগিরই বন্ধ স্টেশন দুটি চালু হবে এবং তা হলে এই রেলপথ দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনও চলাচল শুরু করবে।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।