নৌকা দেখলেই ছুটে আসে মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪:১৪ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৭

নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে মানুষ। কেউ সাঁতরিয়ে, কেউবা কলার ভেলায়, আবার কেউ হাত উঁচিয়ে কাছে ডাকে। চিৎকার করে বলে এদিকে আসেন। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে গত বুধবার দুপুরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী, হলদিয়া ও সাঘাটা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে।

সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী থেকে নৌপথে সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাথালিয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার। পথে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়, হাসিলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইপাড়া দাখিল মাদরাসা ও হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অসংখ্য মানুষ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার অনেকে বসে নদীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কোনো নৌকা যেতে দেখলেই তারা ডাক দেয়, হাত ইশারা করে।

flood

জুমারবাড়ী, হলদিয়া ও সাঘাটা ইউনিয়নের জুমারবাড়ী, গোবিন্দপুর, পশ্চিম গোবিন্দপুর, কানাইপাড়া, চিনিরপটল, হাসিলকান্দি ও দক্ষিণ সাথালিয়া গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের দুর্ভোগ ও দুর্দশার কথা।

পশ্চিম গোবিন্দপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন (৬০) বলেন, ঘরে এক কোমরের বেশি পানি থাকায় স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় ছাপড়া ঘর তুলে আছি। কৃষি কাজ করতাম বন্যার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এক হাজার টাকা সুদের উপর নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। সকালে চিড়ামুড়ি খেয়েছি, দুপুরে বিস্কুট খেয়েছি, সন্ধ্যায় আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। একজন স্লিপ দিয়েছিল। কিন্তু গিয়েও ত্রাণ পাইনি। একবেলা খাই, তো আরেক বেলা উপোষ থাকি।

একই গ্রামের সেমা বেগম (৩৫) বলেন, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরে যা সঞ্চয় ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছি। তিনবেলা ভাত না খেয়ে দুইবেলা করে খাই। একবেলা চিড়ামুড়ি খেয়ে থাকি। কোনোদিন সকালে রুটি খেয়েছি, দুপুরে খাইনি, সন্ধ্যায় ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। এভাবেই চলি। সুদের উপর টাকা নিয়েছিলাম। সেটাও শেষ। আবার টাকা ধার করতে হবে। গরুর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ডাকাত আতংকে রাতে জেগে থাকি।

flood

দক্ষিণ সাথালিয়া গ্রামের দিলবর মিয়া (৪০) বলেন, সবজি কেনার টাকা না থাকায় খিচুরি করে খাই। একবেলা চিড়া-মুড়ি ভিজিয়ে খাই। আবার কখনো রুটি খাই। চারদিকে পানি, সব কাজ বন্ধ। খুব কষ্টে দিন কাটছে। টিউবওয়েল ও টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া পোকামাকড় ও সাপের ভয়ে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না।

জুমারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোস্তম আলী আকন্দ বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। শেষ হলেই আবার বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বন্যাদুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।

flood

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, বন্যায় সাঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪৯টি গ্রামের ৬৩ হাজার ২৮০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১২টি। ২০টির উপরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। সেসব বিতরণের কাজ চলছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

রওশন আলম পাপুল/এফএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।