দিন দিন হাত-পা শুকিয়ে যাচ্ছে সাগরের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট
প্রকাশিত: ০৩:২৮ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পূর্ব খোন্তাকাট গ্রামের হতদরিদ্র শাহিন হাওলাদারের একমাত্র ছেলে মো. সাগর (১৩) অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বয়স যখন আট বছর তখন হঠাৎ তার নাক-মুখ থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে। সেই থেকে এ রকম মাসে দুই-তিন বার নাক-মুখ থেকে রক্ত ঝরে।

ধীরে ধীরে তার হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। পেটও বড় হতে থাকে। চিকিসৎকের পরামর্শ মতো প্রতিমাসে তার শরীরে এক ব্যাগ করে বি পজেটিভ রক্ত দেয়ার কথা। টাকার অভাবে তাও দিতে পারছে না পরিবার। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অসুস্থতার কারণে সে আর স্কুলে যেতে পারেনি। একমাত্র ছেলে এবং সংসারের প্রথম সন্তানের এমন দুরাবস্থায় বাবা শাহিন হাওলাদার ও মা নার্গিস বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমদ্দার বলেন, গত বুধবার (১১ অক্টোবর) সাগরকে তার বাবা আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। শিশুটির শারীরিক অবস্থা দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- সে থেলাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। শিশুটি প্রচণ্ড রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। দ্রুত তাকে রক্ত দেয়া প্রয়োজন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আট বছর বয়সে যখন সাগর অসুস্থ হয় তখন অর্থাভাবে বড় ডাক্তারের কাছে যেতে না পেরে প্রথমে স্থানীয় হোমিও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে ৭-৮ বছর হাতুড়ে চিকিৎসকের ওষুধ খাইয়ে কোনো ফল হয়নি। এমনকি শিশু সাগর কী রোগে আক্রান্ত তখন তাও জানতে পারেনি পরিবার।

হতদরিদ্র বাবা শাহিন হাওলাদার জানান, সাগর তার প্রথম এবং একমাত্র ছেলে সন্তান। রহিমা আক্তার (১১) ও মিম আক্তার (৩) নামে তার আরও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সব মিলে তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছয়জন। নিজে স্থানীয় একটি করাত কলে (স’মিল) শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তা থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পান। মাঝেমধ্যে দিন মজুরিও খাটেন। তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে ছেলের চিকিৎসা খরচ আর হয়ে ওঠে না।

তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ শান্তামারিয়া মিশনারি হাসপাতালে নিয়ে একবার চিকিৎসা করিয়েছিলেন ছেলেকে। ডা. অপু লরেন্স বিশ্বাস নামে সেখানকার এক চিকিৎসক প্রতিমাসে সাগরের শরীরে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে বলেন। তার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ (বি+)। প্রথম কয়েক মাস রক্ত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে গত ছয় মাস ধরে আর রক্ত দেয়া হয়নি। মাসে দুই-তিন বার নাক-মুখ থেকে রক্ত পড়ে, বমি হয়। ছেলেটির শরীর দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে আর পেটও বড় হচ্ছে। জমি জিরাত বলতে মাত্র তিন শতকের একটি বাড়ি। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ভারত সরকারের অনুদানে দো-চালা একটি ছোট্ট টিনের ঘর ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই তার। তাই ছেলের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না।

সাগরের মা নার্গিস বেগম বলেন, ছেলের পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। তার কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। স্বামী যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালে না। এখন ছেলেটিকে চিকিৎসা করাতে না পারলে তাকে বাঁচানো যাবে না। কেউ যদি আমার ছেলেটার জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসতো তাহলে সারাজীবন তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম।

শিশু সাগরের চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন। যা তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব। তাই শিশুটিকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।

শওকত বাবু/আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।