মাশরুম পল্লী নীলকান্ত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৮

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা সদরের অদূরে অবস্থিত পেরাছড়া। সুবিশাল চেঙ্গী ভ্যালির পাশে পেরাছড়ার এক নিভৃত পল্লী নীলিকান্ত পাড়া। চাকমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর আদি গ্রাম হিসেবেই পরিচিত নীলকান্ত গ্রাম। নীলিকান্ত পাড়ার প্রায় প্রতিটি পবিরারে মাশরুম চাষ হয়। পাড়ার অধিকাংশ নারীই মাশরুম চাষে জড়িত। এতে নীলকান্ত পাড়া ইতোমধ্যে মাশরুম পল্লী হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছে।

এ পাড়ারই বাসিন্দা রেখাঞ্জলী চাকমা। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারীর জীবিকা চলে মাশরুম চাষ করে। নিজ বাড়িতেই ঘরের ভেতর ও বাইরে থরে থরে সাজানো মাশরুমের প্যাকেট। নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহে রেখাঞ্জলী চাকমা হয়ে উঠেছেন একজন সফল মাশরুম চাষি।

২০১৪ সাল থেকে তিনি এ পেশায় জড়িত। মাশরুম চাষের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় পোক্ত এ নারী বলেন, শুরুটা এত ভালো ছিল না। অনেক পরিশ্রম করেছি। নায়ারণগঞ্জ ও ঢাকায় গিয়ে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণও নিয়েছি।

৫শ’র বেশি প্যাকেটে মাশরুমের চাষ করেছেন রেখাঞ্জলী চাকমা। রেখাঞ্জলির বাড়ির পাশেই আরেক মাশরুম চাষি সোনালী প্রভা চাকমার বাড়ি। সোনালী চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরভর্তি মাশরুম। তার বাড়ির দুটো ঘরে চলছে মাশরুম চাষ।

সোনালী চাকমা বলেন, প্রায় ৮০০ প্যাকেটে মাশরুম চাষ করেছি। দৈনিক মজুরিতে শ্রমিকরা এসে মাশরুমের প্যাকেট তৈরির কাজ করে।

একা হাতেই মাশরুমের যত্ন নেন সোনালী চাকমা। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ কেজি মাশরুম বিক্রি হয়। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। তবে কালো রঙের মাশরুমের দাম কিছু বেশি বলেও জানান তিনি। মাশরুম বিক্রি করে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় হয় তার।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ আছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত সব মাশরুম খাওয়া যায় না। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুমের চাষ ব্যাপক হারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত ধানের খড়, শিমুল তুলা, ছোলার বেসন ও চাউলের কুড়া ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে স্ট্র মাশরুম চাষ করা হয়।

Masroom-2

আমাদের দেশে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মাশরুম চাষ চলে। তবে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মাশরুমের ফলন কম হয়। ইয়ার মাশরুম দেখতে কালচে রঙের। ইয়ার মাশরুম সারাবছর চাষ করা গেলেও সাধারণত বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়।

বাংলাদেশে অয়েস্টার জাতের মাশরুম সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে। বসতবাড়িতে সারাবছরই এই মাশরুমের চাষ করা যায়। তবে শীত ও বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়।

সূত্রমতে অয়েস্টার মাশরুমের চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ এবং অল্প জায়গায় চাষ করা যায়।

পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর, পেরাছড়া, আপার পেরাছড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে এর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকরা ভালো লাভবান হওয়ায় অনেক কৃষক মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

মাশরুম চাষের জন্য বাড়তি কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। বসত বাড়িতেই এর চাষ করা সম্ভব। মাশরুম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. সরফ উদ্দিন বলেন, মাশরুম চাষের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। মাশরুম উৎপাদন ও বিপণন সহজতর হওয়ায় চাষিরা মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কৃষকদের মাশরুম চাষের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।