খাগড়াছড়িতে চাকমাদের ফুলবিঝু উৎসব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯

ভোরের আলো ফুটতেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দল বেঁধে ছুটছে চাকমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। বর্ণিল সাজে মায়ের হাত ধরে ফুল হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে শিশুরাও। সবার গন্তব্য চেঙ্গী, মাইনী আর ফেনী নদী। সেখানেই মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবীর  উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসাবে সবাই। পিছিয়ে ছিল না অন্য সম্প্রদায়ের দর্শনার্থীরাও। তারাও এসেছিল বন্ধুদের সঙ্গে ফুলবিঝু উপভোগ করতে।

গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে শুক্রবার ফুলবিঝুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।

Khagrachari-FulBizu4

সকলের সুখ, শান্তি আর মঙ্গল কামনায় চেঙ্গী নদীর বুকে ভক্তি-শ্রদ্ধায় কলাপাতায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে বিগত বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে খাগড়াছড়ির চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন। পালিত হচ্ছে তাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব ‘ফুলবিঝু’। সকালে মুহূর্তের মধ্যেই চেঙ্গী নদীর পানি ঢাকা পড়ে নানা রঙের ফুলে ফুলে।

ফুল ভাসাতে আসা শিক্ষার্থী শুভা চাকমা বলেন, নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় এবং সবার মঙ্গল কামনায় নদীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে দিয়েছি।

Khagrachari-FulBizu4

পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসুক, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক এ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রিকি চাকমা। তিনি বলেন, আমরা চাই পাহাড়ের সব জাতিগোষ্ঠী যেন হানাহানি ভুলে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে। পাহাড়ের শান্তি আজকের দিনে বড় চাওয়া।

বৈসাবী উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ১৩ এপ্রিল ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর হারি বৈসু উৎসব পালিত হবে। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হবে বিশেষ পাঁচন। মন্দিরে মন্দিরে চলবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল পালিত হবে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব। মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন মেতে উঠবে জলকেলী উৎসবে। সব দুঃখ, পাপ, তাপ, কালিমা ধুয়ে মুছে দিতে একে অপরের দিকে পানি ছুড়বেন। তরুণ-তরুণীরা ভালোবাসার মানুষের গায়ে পানি ছিটিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবেন।

Khagrachari-FulBizu4

এছাড়া বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। অনুরূপ বিভিন্ন উপজেলায় বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু, চাকমা সম্প্রদায়ের বিঝু আর মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই এ তিনের আদ্যক্ষর নিয়ে পালিত হচ্ছে পাহাড়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব বৈসাবি। বৈসাবি উৎসব ঘিরে শহর ছাড়িয়ে দুর্গম পাহাড়িপল্লীতে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ।

Khagrachari-FulBizu4

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন সম্মিলিতভাবে ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন করে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ‘বৈসাবি’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।