পুরনো ঐতিহ্যে ফিরছে মরা ধানসিঁড়ি
দীর্ঘ ২৪ বছর মৃত অবস্থায় থাকার পর নাব্য ফিরে পেতে যাচ্ছে রূপসী বাংলার প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাসের সেই মরা ধানসিঁড়ি নদী। বহুল প্রতিক্ষিত ধানসিঁড়ির খনন কাজ শুরু হওয়ায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের বাঘরি ও সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা এলাকা থেকে একযোগে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ধানসিঁড়ির খনন কাজ শেষ হলে দুই যুগ ধরে বন্ধ থাকা ঝালকাঠি-রাজাপুর নৌ পথের যোগাযোগ আবার শুরু হবে। ফলে খুব সহজে ও অল্প খরচে জেলা সদর দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে পারবেন।
পাশাপাশি কৃষকদের এক ফসলি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। এছাড়া জেলেদের মাছ ধরাসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ নদীর সুফল ভোগ করতে পারবেন।
জানা গেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিশখালী ও গাবখান চ্যানেলের মোহনা থেকে ধানসিঁড়ি নদীর উৎপত্তি। সেখান থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজাপুর খালে মিশেছে নদীটি। রাজাপুর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে জাঙ্গালিয়া নদী হয়ে আবার বিশখালীতে মিশেছে ধানসিঁড়ির পানি প্রবাহ। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে ধানসিঁড়ির তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে নদীটি।
তাই মরা ধানসিঁড়িতে প্রাণ ফেরাতে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ধানসিঁড়ি খনন প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন থেকে রাজাপুর সদরের বাঘরি পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হচ্ছে। ৪টি এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
কার্যাদেশ অনুযায়ী, ধানসিঁড়ি সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৭০ ফুট চওড়া, ১০ ফুট গভীর ও তলদেশ ২০ ফুট চওড়া করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজাপুর অংশের প্রায় ২ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা খনন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
সম্প্রতি সরেজমিনে খনন করা এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। ধানসিঁড়ি পাড়ের চর ইন্দ্রপাশা গ্রামের আ. লতিফ বলেন, বহুবছর ধানসিঁড়িতে পানি ছিলো না। ফলে কৃষক, জেলে, মাঝিসহ সাধারণ মানুষ দারুণ কষ্টে ছিল। খনন শেষ হলে ধানসিঁড়িতে পানি আসবে। তাই মাছ শিকারের জন্য জাল মেরামত করছি।
রাজাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা রিয়াজউল্লাহ বাহাদুর বলেন, ধানসিঁড়ি খনন সম্পন্ন হলে দুই পাড়ের কৃষি জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। ফলে কৃষি উৎপাদনে নদীটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. আতাউর রহমান বলেন, ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদী এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কাজটি যেন সঠিক ও সুন্দরভাবে হয় আমরা সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, খনন কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এরপর ধানসিঁড়ি আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
আতিকুর রহমান/এফএ/জেআইএম