হাসপাতালের বাথরুমে ঝুলেছিল রোগীর মরদেহ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০২:০১ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

শেরপুর জেলা হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বাথরুমের ভেন্টিলেটরের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো এক রোগীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ছয় সন্তানের জনক মৃত আব্দুল মালেক (৬৫) সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় আইসক্রিম বিক্রেতা ছিলেন বলে তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানিয়েছেন। মূত্রথলির সমস্যা নিয়ে (প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া) গত ২৬ অক্টোবর থেকে তিনি হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বি-১৩ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের রেকর্ড অনুসারে তার নিবন্ধন নম্বর ৩৭৩৮৭/১৪।

হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার সঙ্গেই ছিলেন স্ত্রী ফিরোজা বেগম। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে তার স্বামী আব্দুল মালেক চারবার বাথরুমে যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাথরুমে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ চলে গেলেও তিনি (আব্দুল মালেক) ফিরে না আসায় তাকে বাথরুমে খুঁজতে যান। সে সময় ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে হাসপাতালের অন্য রোগীর লোকজন ও নার্সরা তখন সেখানে দৌড়ে যান।

সংবাদ পেয়ে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত সেখানে ছুটে যান। ঘটনাস্থলে হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন এবং সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।

রাত ১১টার দিকে সরেজমিনে জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গলায় দড়ি দিয়ে ঝোলানো লাশের দুই পা বাথরুমের মেঝেতে লাগানো থাকলেও সামনের দিকে কিছুটা আগানো রয়েছে। মূত্রদ্বারে ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সেখানে অবস্থান করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের আরএমও, মেডিসিন ও সার্জারি কনসালট্যান্টরাও সেখানে অবস্থান করছেন। উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় করছে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। বি-১৩ নম্বর বেডে মৃতের স্ত্রী ফিরোজা বেগম নির্বিকার বসে আছেন। তার সামনে বিছানার ওপর চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্র ছড়িয়ে রয়েছে।

জেলা হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা) ডা. খায়রুল কবীর সুমন জানান, মৃত ব্যক্তির চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানারোগে আক্রান্ত। গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে প্রস্রাব আটকে যাওয়াসহ মূত্রথলির জটিলতা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার অবস্থা এখন ভালোর দিকে ছিল। এর আগে একবার তার আলসারের অপারেশনও হয়েছিল। হাসপাতালের বাথরুমে ফাঁস লাগিয়ে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে ছুটে আসি। পুলিশকে জানানোর পর তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

জেলা হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স শিউলি বেগম বলেন, আমি তখন রোগীদের রাতের শিফটের ওষুধ দেয়ার জন্য রাউন্ডে বারান্দায় রোগীদের কাছে ছিলাম। হঠাৎ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ার্ডের ভেতর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বারান্দা থেকে ওয়ার্ডের ভেতর এসে বাথরুমে এক রোগীর গলায় ফাঁস লাগানোর কথা জানতে পারি। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।

শেরপুর সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলা হাসপাতালের বাথরুম থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে রোগভোগের কারণে মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

হাকিম বাবুল/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।