এমপিওভুক্ত হওয়ার পর স্কুলঘর নির্মাণের প্রস্তুতি
এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে নড়াইলের নড়াগাতি থানার চান্দেরচর এলাকার পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তবে বিদ্যালয়ের কোনো ভবন নেই। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর স্কুল আঙ্গিনার ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল আঙ্গিনায় চাষকৃত নেপিয়ার ঘাস, কলাগাছসহ ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি চান্দেরচর গ্রামের আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে হাজির হন।
তিনি জানান, দুই একদিনের মধ্যে ঘর নির্মাণ হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ শতক জমি অনেক আগেই কেনা হয়েছে। এটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষকের সংখ্যা সাতজন। এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এতদিনেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামো বা ঘর নির্মাণ করা হয়নি কেন? আর ঘর না থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলে কীভাবে? এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হয়ে বিদ্যালয় সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, পাশের একটা টিনের ঘরে এতদিন ক্লাস হয়েছে। ঘর নির্মাণের পর এখানে ক্লাস হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাউলী ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের (সাবেক) পাশে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি টিনের খুপড়ি ঘর। ভেতরে তিনটি কক্ষের মধ্যে দু-তিনটি করে বেঞ্চ রয়েছে। খুপড়ি ঘরের পেছনে ঘন বন-জঙ্গল থাকায় ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরটিতে তেমন জানালা ও দরজা নেই। স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা পরিবেশ। এখানে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো উপস্থিত হয় না। শিক্ষকদের বসার চেয়ার-টেবিলও নেই। প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি টেবিল থাকলেও তার পায়া ভাঙ্গা অবস্থায় আছে।
এদিকে খাতা-কলমে সাতজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ে তাদের দেখা মেলেনি। অনেকে বিভিন্ন কোম্পনিতে চাকরি করেন। তবে এমপিওভুক্ত হওয়ার খবরে অনেকে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা জানান, এমপিওভুক্তির জন্য যে চারটি শর্ত দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান ‘স্বীকৃতি’ থাকা অন্যতম একটি শর্ত। স্বীকৃতির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠানের নামজারি, জমি সংক্রাস্ত সকল তথ্যের মূল কপি যাচাই-বাছাই কমিটিকে প্রদর্শন, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনুযায়ী ক্লাস রুমের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষক, ফলাফল, বিশুদ্ধ খাবারপানি, শৌচাগার, জনসংখ্যা, নিকটবর্তী প্রতিষ্ঠানের ভৌগলিক দূরত্ব অন্যতম। অথচ নড়াইলের নড়াগাতি থানার চান্দেরচরের পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো, ক্লাস রুম, শিক্ষকসহ অনেক কিছু অপূর্ণ রয়েছে। তবুও গত ২৩ অক্টোবর ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় আছে এই বিদ্যালয়টি।
অন্যদিকে নড়াইলের কালিয়া উপজেলাধীন নড়াগাতি ও কালিয়া থানা এলাকায় অনেক যোগ্য স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদ ও এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কালিয়া উপজেলায় এমপিওভুক্ত হওয়ার মতো যোগ্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো না করে অবকাঠামোসহ অনেক ক্ষেত্রে অপূর্ণ পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানটি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার আগে কিছু কার্যক্রম শুরু করেছে।
এদিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত নড়াগাতি থানার মাউলী পঞ্চপল্লী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮৫ জন এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ৯৩ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠাদান, জেএসসিতে ভালো ফলাফল, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ এমপিওভুক্তির সব শর্ত ঠিক থাকলেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাফিজুল নিলু/আরএআর/এমকেএইচ