শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না লাইলী বেগমের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না ঝালকাঠির ভাষাসৈনিক লাইলী বেগমের। তিনি ঢাকার সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাত ৯টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। লাইলী বেগম দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত কারণে দূরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও আট কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বুধবার (১১ মার্চ) সকালে তার মরদেহ শহরের পূর্বচাঁদকাঠির বাসভবনে নিয়ে আসা হলে সেখানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ জোহর পূর্ব চাঁদকাঠি এবাদুল্লাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা এবং সদর উপজেলার কল্যাণকাঠি গ্রামে বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লাইলী বেগমের ছেলে মো. উজ্জল হোসেন জানান, ডায়াবেটিস ও প্রেসারসহ বার্ধক্যজনিত বহু রোগে ভুগছিলেন লাইলী বেগম। ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়। সেখানে সিটি হাসপাতালে ২০ ফেব্রুয়ারি ভর্তি করার পর থেকে ২০ দিন ধরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো তাকে। মঙ্গলবার (১০মার্চ) রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন লাইলী বেগম।
তিনি আরও জানান, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঝালকাঠিতে ছাত্রীদের মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তার মা লাইলী বেগম। এ কারণে পাকবাহিনী মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের নাম-পরিচয় জানতে তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। প্রলোভনে রাজি না হওয়ায় তাকে মানসিকভাবে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
পৌর কাউন্সিলর হাফিজ আল মাহমুদ জানান, লাইলী বেগম গার্লস স্কুলে (সরকারী হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়) ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালীন অবস্থায় ঝালকাঠির ভাষা আন্দোলনের মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবি তিনি অনেক আগ থেকেই করেছিলেন। ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি শিশু পার্ক উন্মুক্ত মঞ্চে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক তাকে ভাষাসৈনিক হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, ঝালকাঠির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও জনশ্রুতি অনুযায়ী তিনজনকে ভাষাসৈনিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুইজনকে মরণোত্তর সম্মাননা এবং লাইলী বেগমকে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র দেয়া হয়েছিল। এ বছরের একুশে ফেব্রুয়ারিতেও তাকে সম্মাননার আয়োজন ছিল কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণে ঝালকাঠিতে না থাকায় তাকে আর সম্মাননা দেয়া সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার রাতে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বুধবার সকালে তার মরদেহ পূর্বচাঁদকাঠির বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
ভাষাসৈনিক লাইলী বেগম জীবদ্দশায় এক সাক্ষাতকারে এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশও স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ভাষাসৈনিকদের কোনো স্বীকৃতি বা সম্মাননা মেলেনি। বয়স অনেক হয়েছে চলাচল করতেও অনেক কষ্ট হয় তার। যে কোনো সময় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন। তবে মৃত্যুর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কথার বলার ইচ্ছা তার।
আতিকুর রহমান/আরএআর/জেআইএম