শরীয়তপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না অধিকাংশ প্রবাসী
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে যেসব প্রবাসী শরীয়তপুর এসেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিদেশফেরত অধিকাংশ প্রবাসীই মানছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা। থাকছেন না হোম কোয়ারেন্টাইনে।
শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) থেকে ১৮ মার্চ (বুধবার) দুপুর পর্যন্ত ২৭৭ জন প্রবাসী শরীয়তপুরে এসেছেন। এদের মধ্যে ১৪ দিন পার হওয়ার পর ৫৪ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ফলে শরীয়তপুরে হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন ২২৩ জন। সদর হাসপাতালে পাঁচ শয্যা ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ শয্যা করে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য জেলায় ১০০ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরের অন্তত দেড় লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। তাদের অধিকাংশই ইতালিতে বসবাস করেন। এর মধ্যে নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের রয়েছেন প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এসব প্রবাসীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী। কারণ বিদেশ ফেরত অধিকাংশই স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মানছেন না, থাকছেন না হোম কোয়ারেন্টাইনে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় যেসব প্রবাসী মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে ‘সংক্রমণ রোগ নিরোধ আইন’ প্রয়োগ করা হচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে এলাকা ও বাজারে ঘোরাঘুরির দায়ে দুজন ইতালি প্রবাসীকে ৭৫ হাজার টাকা এবং একজন সৌদি আরব প্রবাসীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার এবং সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ও একই উপজেলার ভোজেশ্বর এলাকার দুই যুবক ইতালি ও দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন সপ্তাহখানেক আগে। তাদের মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) স্বজনদের নিয়ে এলাকায় মোটরসাইকেলে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের দেশে এসে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না কেন জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আমাদের ইতালি ও দুবাই থেকে পরীক্ষা করে দেশে পাঠানো হয়েছে। আমাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। নিরাপদে থাকলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরাপদ। আমরা সুস্থ আছি। তাই ঘুরে বেড়াচ্ছি।
নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর এলাকার এক দুবাই প্রবাসীর বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। দুবাই প্রবাসীর স্ত্রী জানান, তার স্বামী ১০ দিন হলো দুবাই থেকে ফিরেছেন। দেশে ফিরে এলাকায় ও বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জেলার নড়িয়া উপজেলার নজরুল ইসলাম (৩৮) বলেন, শুনেছি ইতালির অবস্থা খুবই খারাপ। আমার আপন ভাই-ভাবিসহ প্রায় ২০ জন ইতালিতে অবস্থান করছে। তাদের নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ইতালি থেকে অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় ও বাজারে ঘোরাফেরা করছে।
ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মেম্বার ইব্রাহিম সরদার বলেন, আমার চার মেয়ে ও চার ছেলে। তিন ছেলেই বিদেশে থাকে। দুজন কাতারে এবং একজন কুয়েত। আমি সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ওদের নিরাপদে থাকতে বলেছি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এসএস আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানান, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন প্রবাসীদের পর্যবেক্ষণ করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে এসব স্বাস্থ্যকর্মী মুখোমুখি হচ্ছেন নানা বিড়ম্বনার। তবে সব ধরনের বাধা অতিক্রম করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা মাঠে থাকবেন। যারা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
ছগির হোসেন/আরএআর/এমএস