সাড়ে ৩শ কি.মি. সাইকেল চালিয়ে বরগুনা গেলেন করোনা আক্রান্ত যুবক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৯:১৩ পিএম, ১৫ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনা এসেছেন এক যুবক। গত ৭ এপ্রিল ঢাকার সাভার থেকে যাত্রা শুরু করে ১০ এপ্রিল বরগুনা সদর উপজেলার নিজ বাড়ি পৌঁছান তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এমন অসচেতনভাবে সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে বরগুনায় আসার কথা জানতে পেরে আঁতকে উঠেছেন অনেকেই।

এদিকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসায় ওই যুবককে ঘরে উঠতে দেননি স্ত্রী। বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্বশুরবাড়ি আশ্রয় নেয়ায় তার শ্বশুরবাড়িসহ দুটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবকের স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন এই যুবক। গত ৫ এপ্রিল থেকে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর স্বজনরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। কিন্তু তিনি চিকিৎসকের কাছে যাননি।

এরপর দেশজুড়ে চলা অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেই গত ৭ এপ্রিল সাভারের স্থানীয় এক পরিচিতজনের একটি সাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা রওনা করেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবক। অসুস্থ শরীরে টানা তিনদিন সাইকেল চালিয়ে গত ১০ এপ্রিল বরগুনা সদর উপজেলার নিজ বাড়ি পৌঁছান তিনি। এসময় তার স্ত্রী তাকে ঘরে উঠতে দেননি। নিরূপায় হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।

ঢাকা ফেরত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবকের প্রতিবেশী শিক্ষক দম্পতি জানান, অসুস্থ অবস্থায় আমরা ওই যুবকের বাড়ি আসার খবর জানতে পারি ১১ এপ্রিল বিকেলে। মূলত ঢাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরার থেকেও আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে বেশি আলোচিত ছিল লকডাউনের মধ্যে তিনদিন ধরে সাইকেল চালিয়ে তার বরগুনা আসার খবর।

তারা আরও বলেন, বাড়িতে আসার পর দুদিন তিনি তার শ্বশুরের ঘরেই ছিলেন। বাইরে বের হননি। অন্যদিকে তার স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে ছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবকের বাড়িতে। পরে স্থানীয় কয়েকজন তার ঢাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় বরগুনা আসার খবর পুলিশে জানালে গত ১২ এপ্রিল পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা ওই যুবককে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পরে ওইদিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়। এরপর গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার রিপোর্ট আসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। রিপোর্টে ওই যুবককে করোনা পজেটিভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবকের বাবা বলেন, ৭ এপ্রিল সকালে আমার ছেলে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি রওনা করার খবর জানতে পারি। পরে ছেলের ফোনে কল দিয়ে ওকে বাড়ি আসতে নিষেধ করি। কিন্তু সে তা শোনেনি।

তিনি আরও বলেন, তিনদিন সাইকেল চালিয়ে ১০ এপ্রিল বিকেলে সে বাড়ি আসে। এরপর আমার ছেলের বউ তাকে ঘরে উঠতে দেয়নি। তাই সে শ্বশুরবাড়ি অবস্থান নেয়। শ্বশুরবাড়িতে আসার পর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর জানতে পারি ছেলের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই যুবকের মা জানান, হঠাৎ ফোনে বাড়িতে রওনা করার কথা জানায় আমার ছেলে। কিন্তু সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় আমরা তাকে প্রথমে আসতে নিষেধ করি। কিন্তু সে আমাদের কথা না শুনে সাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা আসে।

করোনায় আক্রান্ত ওই যুবকের স্ত্রী বলেন, তাকে আমি বরগুনা আসতেই নিষেধ করেছিলাম। তাকে আমি সাভারে ডাক্তার দেখাতে বলেছিলাম। কিন্তু সে শুনেনি। বরগুনা আসার পরও তাকে আমি বাড়ি আসতে নিষেধ করে হাসপাতাল যেতে বলি। কিন্তু সে আমার কোনো কথাই শুনেনি। তাই তাকে আমি ঘরে উঠতে দেইনি।

এদিকে ঢাকা ফেরত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই যুবক এখন চিকিৎসাধীন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে। একই সঙ্গে চিকিৎসাধীন তাবলিগ জামাত থেকে সংক্রমিত হয়ে ঢাকাফেরত এক বৃদ্ধ এবং নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা আসা আরেক যুবক।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই যুবক এখন ভালো আছে। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার কাছাকাছি থাকছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্য দুজনও ভালো আছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ঢাকা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাইকেল চালিয়ে ওই যুবক বরগুনা এসেছেন সে বিষয়ে আমি অবগত। ঢাকা থেকে এসে ওই যুবক স্ত্রীর জন্য নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে শ্বশুরবাড়ি আশ্রয় নেন। এজন্য তার শ্বশুরবাড়ি ও এক শ্যালকের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।