করোনার নমুনা নিতে অবিরাম ছুটে চলছেন শেফা ও তার দল
চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সারাদেশের গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পরে। তবে রোগ সম্পর্কে জনমনে সচেতনতা বাড়লেও এখনও আতংক রয়েছে সবার মাঝেই। গ্রাম বা পাড়া মহল্লায় সন্দেহজনক ব্যক্তি কিংবা বহিরাগতদের দেখলেই আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ অথবা থানা পুলিশকে খবর দিচ্ছেন।
আর এসবের মাঝেই নিজের আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে উপেক্ষা করে করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার আওতায় আনতে বিরামহীনভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ইপিআই টেকনিশিয়ান শেফা খানম ও তার দল। দিনরাত যখনই নতুন রোগীর খবর আসে তখনই ডাক পড়ে ইপিআই টেনিশিয়ান শেফা ও তার দলের। এছাড়া সন্দেহভাজন রোগীর শরীর থেকে ‘সোয়াব’ সংগ্রহকারীদের দলে একজন মেডিকেল অফিসারও নেই। নেই ব্যক্তিগত সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পিপিই ও মাস্ক।
পঞ্চাশোর্ধ শেফা দুই সন্তানের জননী। স্বামী-সন্তান রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অবিরাম ছুটে চলেছেন এ পাড়া থেকে ও পাড়ায়। নতুন কারও করোনা আছে কি না পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে তাকে চিকিৎসার আওতায় আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তার দল। চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে গত তিন সপ্তাহে কমপক্ষে ২৩ জন সন্দেহভাজন রোগীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। তার এই দলে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই।
দলের আরেক সদস্য হলেন সিনিয়র টেকনিশিয়ান আব্দুল মতিন। সঙ্গে একজন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালককে নিয়ে অবিরত ছুটে চলা তাদের। রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা ‘থ্রট সোয়াব’ পরীক্ষার জন্য জেলা সদরে পাঠানোর দায়িত্বও তাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। গড়াই নদীর ধু ধু বালুচর পাড়ি দিয়ে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের বাড়ির সদস্যদের পরীক্ষার জন্য থ্রট সোয়াব সংগ্রহে যাচ্ছিলেন শেফা ও তার দল। হাঁটতে হাঁটতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শেফা খানম বলেন, সেবার ব্রত নিয়েই সম্ভাব্য করোনা রোগীর ‘থ্রট সোয়াব’ সংগ্রহের মতো বিপজ্জনক কাজ করছেন তারা। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন জটিল তেমনি পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রতিটি স্তর আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে তিনি মনে করেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে বিপদে পড়া মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার।
করোনাযুদ্ধে সামিল হওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীদের একটি তালিকা জেলা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় সোয়াব সংগ্রহকারী দলের এই সদস্যদের নাম নেই বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামানও স্বীকার করেন শেফার দলটির গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা। তিনি বলেন, মেডিকেল অফিসাররা ইউনিয়ন ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করায় সোয়াব সংগ্রহকারীদের দলে মেডিকেল অফিসার দেয়া সম্ভব হয়নি। আগামীতে এই দলে একজন মেডিকেল অফিসার দেয়া হবে। তবে শেফা ও তার দলের অসামান্য অবদান রাখার কাজটিকে সরকারের দৃষ্টিগোর করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আল-মামুন সাগর/এফএ/এমকেএইচ