মুন্সিগঞ্জে থেকেই করোনা জয়ের গল্প শোনালেন বৃদ্ধা মা ও ছেলে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:৩২ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২০

টানা ১৭ দিন করোনার সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। তিনি শুধু একাই সুস্থ হননি। করোনা আক্রান্ত ছেলেকেও সুস্থ করে একসঙ্গে আইসোলেশন ইউনিট থেকে বাড়ি ফিরেছেন।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকালে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন সেন্টার থেকে করোনা আক্রান্ত মা ও ছেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে করোনা জয় করা বৃদ্ধা গীতা রানীকে গত শনিবারই আইইডিসিআর থেকে সুস্থ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং আজ তার ছেলে অরুণ কুমার পালকে।

করোনা জয় করা গীতা রানী পাল (৭০) ও তার ছেলে অরুণ কুমার পাল (২৩) সিরাজদিখান উপজেলার আবিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

গীতা রানী পাল বলেন, গভীর মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করায় দ্রুত সেড়ে উঠেছেন তিনি ও তার ছেলে। এর আগে গত ১০ এপ্রিল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ছিলেন তারা। আক্রান্ত ওই বৃদ্ধার সংস্পর্শে এসে তার ছেলে অরুণ ও আরও এক ছেলের বউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

গীতা রানী ও তার ছেলে অরুণের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, চলতি মাসের ৩ তারিখ জ্বর-সর্দি নিয়ে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে যান গীতা রানী। পরবর্তী ৭ তারিখ স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা থেকে ফোনের মাধ্যমে জানানো হয় তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। পরদিন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইসোলেশন সেন্টারে ছিলেন তারা।

করোনা জয়ী ছেলে অরুণ পাল জানান, প্রথমে তার মাকে একা আইসোলেশনে আনা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে তার মায়ের সাথে হাসপাতালে চলে আসেন। ১৩ এপ্রিল তার মা এবং তারসহ পরিবারে আরও ৬ জনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন জানতে পারেন সে ও তার এক ভাবি আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সাহস হারাননি। তার ভাবি হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেন। আমরা মা-ছেলে হাসপাতালে থাকি। সেখানে মা মনোবল হারাননি। আমিও মাকে সব সময় সাহস দিয়েছি। দু’বেলা গরম পানির ভাপ নিয়েছি। খাওয়া থেকে সব কাজে গরম পানির ব্যবহার করেছি। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল খাওয়ানো হয়। এতে করে সহজেই মা এবং আমি সেড়ে উঠি।

গীতা রানী ও তার ছেলে মনে করেন, গভীর মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করলে যে কোনো রোগী করোনাভাইরাস থেকে দ্রুত সেড়ে উঠতে পারে।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বদিউজ্জামান বলেন, ৭০ বছরের ওই নারীর পাশাপাশি তার ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। পরপর দুটি রিপোর্ট তাদের নেগেটিভ এসেছে। তাই তাদের আজ ছাড়পত্র দিয়ে আইসোলেশন ইউনিট থেকে বিদায় জানানো হয়। এছাড়া গীতা রানীর এক পুত্রবধূরও করোনা শনাক্ত হয়। তিনি বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তিনি ভালো আছেন। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তার একটি রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আগামী ২৯ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করে আবার আইডিসিআরএ পাঠানো হবে।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, আমরা তাদের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি ভিটামিন সি, গরম পানির ভাপ, গরম পানির গড়গড়া ও ফলমূল খাবারের ব্যাপারে বিশেষ জোড় দেই। তারাও তা মেনে চলে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় মা-ছেলে দুজনেই সাহসী ও দৃঢ় মনোবলের মানুষ। তাই তারা দ্রুত সেড়ে উঠেছেন।

মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী এই নারী ও তার ছেলে এখন পুরোপুরি সুস্থ এবং করোনা মুক্ত। ৭০ বছরের নারী ও তার ছেলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে করোনাকে জয় করেছে। ঘটনাটি সকল অসুস্থদের বিশেষভাবে শক্তি যোগাচ্ছে। এটি হতে পারে আরেকটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। অসুস্থদের মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে গীতা রানীর ছেলে এবং এর আগে গত শনিবার গীতা রানীকে সুস্থ হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এই বৃদ্ধার ছেলের বউ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনিও ভালো আছেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলা থেকে ৬৩৪ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮২টির ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে মৃত ৬ জনসহ ৭৫ জনের ফলাফল পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুইজন।

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।