করোনা দুর্যোগে আশ্রয়হীন সেই বৃদ্ধার পাশে পঞ্চগড়ের ডিসি
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে সন্তানদের কাছে ঠাঁই না পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় বসে থাকা সেই বৃদ্ধা ইশারন নেছার পাশে দাঁড়ালেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন।
শনিবার দুপুরে তিনি আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পাখোরতলা গ্রামের বৃদ্ধার তৃতীয় মেয়ে আজিমা খাতুনের বাসায় যান। সেখানে বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বৃদ্ধার থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
পরে জেলা প্রশাসক তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং আঘাত পাওয়া পায়ের উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দেন। তিনি বৃদ্ধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ উপহার সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, তেল, নুডলসসহ শুকনো খাবার, একটি স্থায়ী ঘরের জন্য ঢেউটিন ও নগদ ২০ হাজার টাকা দেন।
এসময় আটোয়ারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলীসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ইশারন নেছার স্বামী মজত আলী মারা যায় মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। ৫ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মারা গেছেন। বাকি চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। তিন মেয়ের স্বামীর বাড়ি মির্জাপুর ইউনিয়নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধা তার স্বামীর ভিটায় থাকতেন। সৎছেলেদের একজন তাকে দেখভাল করতেন। কিন্তু সেই সন্তানও মারা গেছে। সবকিছু বিক্রি করে একই ইউনিয়নের পাখোরতলা এলাকায় সেজ মেয়ে আজিমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন ওই বৃদ্ধা।
১৫-১৬ বছর ধরে সেখানে থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাসখানেক আগে এক মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পিছলে পড়ে পায়ে আঘাত পান ইশারন। তারপর থেকে হাঁটতে পারেন না তিনি। এ অবস্থায় মাকে টানতে না পেরে তার মেয়ে আজিমা তাকে রেখে আসে সৎভাই জাহিরুলের বাড়িতে। জাহিরুল ও তার ছেলে সলেমান এক মাস পর তাকে আবার রেখে আসে আজিমার বাড়ি। কয়েক দিন পর আজিমা আবার রেখে আসে জাহিরুলের বাড়ি।

একপর্যায়ে করোনাময় দুর্যোগে অভাবের তাড়নায় তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসহায় বৃদ্ধাকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে রেখে চলে যায়। রাত হলেও তাকে কেউ বাড়িতে নেয়ার উদ্যোগ নেয়নি। রাতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক বৃদ্ধার খাবারের ব্যবস্থা করেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বৃদ্ধাকে মেয়ে আজিমার বাড়িতেই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমার কানে আসার পরই আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বৃদ্ধার খোঁজখবর নেই। আজ ওই বৃদ্ধার জন্য খাদ্যসামগ্রী, স্থায়ী বাসস্থানের জন্য ২ বান টিন ও নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। যদি ওই বৃদ্ধার খাবার শেষ হয়ে যায় তাহলে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আরও খাদ্যসামগ্রী পাঠাব। তার সন্তানরা যেন বৃদ্ধার দেখাশোনা করেন সেজন্য তাদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে।
সফিকুল আলম/এমএএস/এমকেএইচ