ফেসবুকে সময় কাটাচ্ছেন সাতক্ষীরার ১৮ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থী
করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিপর্যস্ত দেশ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী গত ১ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও স্থগিত করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ফলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। সাতক্ষীরার কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ১৮ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থী এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। বাড়িতে অলস সময় পার করছেন এসব শিক্ষার্থী। অনলাইনে বা ফেসবুকে কাটছে এসব শিক্ষার্থীর সময়।
শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ বাকি বিল্লাহর মেয়ে বৈশাখী নূর। চলতি বছর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে পড়েছেন বৈশাখী।
বৈশাখী নূর বলেন, ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেটি নিশ্চিত নই। পরীক্ষার জন্য যে প্রস্তুতি ছিল সেটিও এখন আর নেই। আমার এসএসসির ফলাফল এ প্লাস থাকলেও এইচএসসির ফলাফল খারাপ হবে বোধহয়।
দীর্ঘদিন বাসায় থেকে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি জানিয়ে সাতক্ষীরা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি থেকে যেমন পিছিয়ে পড়েছি তেমনি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। বই নিয়ে বসলেও মনোযোগ বসছে না। করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি সবাই। আবার পরীক্ষার রুটিন ঘোষণার পর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাসান আলী বলেন, পরীক্ষার ১০-১৫ দিন আগেই করোনাভাইরাস ধরা পড়লে কলেজ, কোচিং, প্রাইভেট সব বন্ধ হয়ে যায়। এতে পরীক্ষার প্রস্তুতি থেকে পিছিয়ে পড়েছি। এখন ঘরে বসে অলস সময় পার করছি। অনলাইন, ফেসবুকে সময় কাটছে। বই নিয়ে বসলেও পড়া হচ্ছে না। এটা নিয়ে পরিবারও উদ্বিগ্ন। নতুন করে পরীক্ষার রুটিন ঘোষণার পর যদি প্রস্তুতির জন্য সময় না পাওয়া যায় তবে পরীক্ষার ফলাফল খুব খারাপ হবে।
সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরাও। সাতক্ষীরার পাটলেঘাটা থানার মনোহরপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, আমি গরিব মানুষ। কষ্ট করে ছেলেটাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। প্রাইভেট খরচ দেয়া, খাতা-কলম কেনাসহ সব খরচ করছি কষ্ট করে। এখন পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। কবে অনুষ্ঠিত হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাসায় থেকে ছেলেটা লেখাপড়ায় মনোযোগী হচ্ছে না। বাড়িতে বসে বিভিন্নভাবে সময় পার করছে ছেলেটা।
বাড়িতে অলস সময় না কাটিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব বসু। তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখান থেকেই নির্ধারিত হয় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত। কে কোথায় কিভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে তা এখান থেকে নির্ধারিত হয়। যার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করেই করোনার তাণ্ডবে জর্জরিত মানবজীবন। বিপন্ন হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু। জীবন বাঁচাতে শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ। তবে এই বাড়তি সময়টা যদি শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অলস না কাটিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় তবে ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এই সময়টা কাজে লাগিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সবধরনের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ। এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি পিছিয়ে গেছে। ছুটিকালীন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য আমাদের পরামর্শ হলো- তারা যেন নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ও লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়।
তিনি বলেন, জেলায় এইচএসসির সাধারণ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৩ হাজার। এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ৪৪৬৬ ও ভোকেশনাল ৩০২ জন। ১৭ হাজার ৭৬৮ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছেন সাতক্ষীরায়। এসব শিক্ষার্থীর জন্য পরামর্শ থাকবে, তারা যেন পরীক্ষার প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন।
আকরামুল ইসলাম/এএম/পিআর