কুমিল্লায় রেকর্ড পরিমাণ করোনা পজিটিভ, বিস্মিত পুলিশ
কুমিল্লায় উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার নয় উপজেলায় নতুন করে রেকর্ড সংখ্যক ৪৯ জনের করোনা পজিটিভ ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে দেবিদ্বার থানায় রয়েছেন ১৪ পুলিশসহ ১৭ জন।
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আইইডিসিআর ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাওয়া করোনা পজিটিভ ফলাফল দেখে অবাক পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে নেয়া নমুনা ও পরীক্ষার ফলাফলে ভিন্নতা থাকায় গোলমাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। আইইডিসিআর থেকে পাঠানো রিপোর্টে থানার তিন পুলিশের করোনা পজিটিভ এসেছে অন্যদিকে কুমেক ল্যাব থেকে এসেছে ১৪ জন পুলিশের করোনা পজিটিভ।
এ অবস্থায় জেলায় নতুন করে ৪৯ জনের আক্রান্তের ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২২০ জনে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্যমতে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দেবিদ্বার থানায় ঢাকা ও কুমিল্লার ল্যাবের ১৭ জনসহ উপজেলায় ৩৫ জন, দাউদকান্দিতে দুইজন, চান্দিনায় দুইজন, হোমনায় একজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় তিনজন, বুড়িচংয়ে একজন, মুরাদনগরে তিনজন, লালমাইয়ে একজন এবং মনোহরগঞ্জের একজন রয়েছেন।
এ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা থেকে মোট চার হাজার ২২৪ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এসেছে চার হাজার ১৪ জনের। এর মধ্যে পজিটিভ ফলাফল এসেছে ২২০ জনের। করোনায় মারা গেছেন ১০ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ জন। করোনায় মৃত ১০ জনের মধ্যে আটজনের বাড়িই জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
দেবিদ্বার থানা পুলিশের ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন, বুধবার থানার স্টাফ ও বেসরকারি কর্মচারীসহ ৬৭ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বুধবার রাতে আসা ফলাফলে সেখানে থানার তিনজন পুলিশের করোনা পজিটিভ ফলাফল আসে। অবাক করা বিষয় হলো একই ব্যক্তিদের নমুনা এর আগে সোমবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেখানের ফলাফলে থানার পুলিশসহ ১৪ জনের পজিটিভ ফলাফল আসে। ফলাফলে এমন ব্যবধান দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। তবুও এ নিয়ে কোনো বিশ্লেষণে না গিয়ে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। আগামী সপ্তাহে আবার নমুনা পরীক্ষা করা হবে তাদের।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, ২৪ ঘণ্টার অধিক সময়ের ব্যবধানে যেহেতু নমুনা নেয়া হয়েছিল; তাই ফলাফলে পরিবর্তন হতেই পারে। তাদের সবার করোনা নিশ্চিত হতে কয়েকদিন পর পুনরায় নমুনা নেয়া হবে।
জেলার করোনার হটস্পট হিসেবে পরিচিত দেবিদ্বার উপজেলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৭ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে উপজেলার মোগসাইর গ্রামের এক ফল ব্যবসায়ী মারা যান। পরে ওই গ্রামের ১৫ জনের করোনা পজিটিভ আসে। বৃহস্পতিবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওই গ্রামসহ পাশের ১১ গ্রাম ও বাজার লকডাউন করা হয়েছে।
ডা. আহাম্মদ কবীর আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দেবিদ্বারের ১৩০টি নমুনার ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে ১৬টি পজিটিভ এবং বাকি ১১৪ নেগেটিভ। পজিটিভদের মধ্যে দেবিদ্বার থানায় ১৪ জন, চাঁপানগরে একজন এবং বারেরা গ্রামে একজন। বারেরা গ্রামে মারা যাওয়া নারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেবিদ্বারে মোট করোনা পজিটিভ ৭৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। বাকিদের মধ্যে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি আছেন তিনজন। বাড়িতে হোম আইসোলেশনে আছেন ৬৬ জন।
কামাল উদ্দিন/এএম/বিএ