‘ঘুমের মধ্যেও মনে হয় নমুনা নিচ্ছি’

‘মানুষ আমাদের দেখে ভয়ও পায়। আবার দেখতে এগিয়েও আসে। সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বের হই আর ফিরি রাত ৮-৯টার পর। অনেক সময় গভীর রাতও হয়ে যায়। পরিস্থিতিটা এমন হয়েছে যে ঘুমের মধ্যেও মনে হয় নমুনা নিচ্ছি। পরীক্ষার ফল জানাচ্ছি। ’
কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) জুয়েল হোসেন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) ইজাজুল হক।
তারা আরও বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন একটু ভয় লাগতো। তবে মনে প্রচণ্ড সাহস ছিল। সরকারি চাকরি করছি। আমরাও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। মনে হয় দায়িত্ব পালন না করতে পারলে পেশাটাই বৃথা। তবে মানুষের কানাঘুষা ইদানিং বেশি শুনতে হয়। যখন কারও করোনা আক্রান্তের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সবাই ভাবে আমরাও আক্রান্ত। কেউ আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে চায় না। কথাও বলতে চায় না।’
এই দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মির্জাপুর উপজেলায় অব্যাহতভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে চলছেন। তাদের সহায়তা করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল আউয়াল সাগর।
গত ৮ এপ্রিল থেকে কাজ করা এই দুই করোনাযোদ্ধা শুক্রবার (১৯ জুন) পর্যন্ত ১০২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। টাঙ্গাইল জেলায় সর্বোচ্চ মির্জাপুরে ১১০ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ২৯ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জুয়েল হোসেন ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০১৩ সালের মে মাসে মির্জাপুরে বদলি হয়ে আসেন। ইজাজুল হক ২০০৪ সালে মির্জাপুরে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পরে অন্যত্র বদলি হন। পদোন্নতি পেয়ে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর ফের মির্জাপুরে যোগদান করেন।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জুয়েল হোসেন ও ইজাজুল হক জানান, শুরুতে তারা মোটরসাইকেলযোগে নমুনা সংগ্রহ করতেন। এখন অনেক সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স ফ্রি থাকলে তাতে চেপে যাতায়াত করেন। তবে যেসব জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স যায় না সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে কিংবা হেঁটে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসেন। তাদের কাজে অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল আউয়াল সহযোগিতা করেন। সংগৃহীত নমুনা তারা জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকে নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়।
তারা জানান, জনবহুল মির্জাপুর উপজেলায় তারা মাত্র দুজন নমুনা সংগ্রহ করেন। অনেক সময় দুজনের জন্য নমুনা সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে যায়।
মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাকসুদা খানম বলেন, দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এই দুর্যোগের সময় যেভাবে কাজ করছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তারা খুব পরিশ্রম করেন। রাত নেই, দিন নেই পরিশ্রম করেই চলছেন। তারা একদিনে ৭২ জনের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরও জানান, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজের জন্য টেকনোলজিস্টের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কিংবা ওই টেকনোলজিস্টরা কাজে আগ্রহী হলে এই দুজনের কষ্ট কিছুটা কমে যাবে।
এস এম এরশাদ/আরএআর/এমএস