দুশ্চিন্তায় খুলনার খামারিরা, অনলাইনে গরু বিক্রির পরিকল্পনা
মাসখানেক বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছর এই সময়ে গরু নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা আতঙ্কে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খুলনার প্রান্তিক খামারিরা। গরুর দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তবে প্রাণিসম্পদ দফতর এবার অনলাইনে গরু বিক্রির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
খামারিরা বলছেন, এবার গরু লালন-পালনের খরচের তুলনায় প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই খামার বন্ধ করতে বাধ্য হবেন অনেকেই।
একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খুলনা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে করোনা কারণে প্রান্তিক খামারিরা গরুর সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। একদিকে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও অন্যদিকে গরুর দাম কম হওয়ায় দিন দিন তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া গ্রামের আলাউদ্দীন মিয়া জানান, তিনি ঈদুল আজহাকে টার্গেট করে ২৭টি গরু নিয়ে একটি খামার গড়েছেন। খামারে থাকা এক একটি গরু প্রায় এক বছর আগে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় কেনা। এসব গরু বাড়তি লাভের আশায় লালন-পালন করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে দাম হচ্ছে তাতে মনে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি গরুতে লোকসান গুনতে হবে।
খামার মালিক মো. আওছাফুর রহমান জানান, বর্তমানে তার খামারে ছোটবড় মিলে ৩৫টি গরু আছে। গরুগুলোকে কোরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য গত ছয় মাস ধরে তিনি লালন-পালন করছেন। বাজারে গরুর যে দাম তাতে চিন্তা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
কয়ছার উদ্দীন নামে এক খামারি জানান, গরু পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই তিনি গত আট বছর ধরে খামার করে গরু বিক্রি করছেন। তার খামারে ২৫টি গরু রয়েছে। একদিকে গো-খাদ্যের চড়া দাম তার ওপর করোনায় বাজার মন্দা হওয়ায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০ জন গবাদিপশুর খামারি রয়েছেন। সব থেকে বেশি খামার রয়েছে তেরখাদা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এসব খামারে মোট গবাদিপশু আছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৯৬৮টি গরু ও ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক বলেন, খুলনার খামারে থাকা বেশির ভাগ পশু বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খামারিরা অনেকটা বিপদে পড়েছেন। আমরা তাদের মনোবল শক্ত রাখতে অনেক চেষ্টা করছি। অন্যান্য বছর খুলনায় কোরবানির পশুর মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ স্থানীয় খামারিরা পূরণ করতেন। এ বছরও তারা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য গরু-ছাগল পালন করছেন। তবে করোনার প্রকোপ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ এবার কোরবানি দেবে না। এতে খামারিদের পশুও কম বিক্রি হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর প্রতিটি গরুতে একজন খামারি ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতেন। এবার লাভের অংশটা অনেক কমে যাবে। অনেকের লোকসানও হতে পারে। তবে আমরা খুলনার খামারিদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে গরু বিক্রি করা যায় কি-না সেই চেষ্টা করছি।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/এমএস