৪০ বছরেও ভাগ্য বদলায়নি আতাব আলীর
দিনমজুর বাবা সংসারে অভাবের কারণে লেখাপড়া করাতে পারেননি। তাই মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই কাজে নেমেছিলেন আতাব আলী (৫৫)। প্রথমে অন্যের বাড়িতে খাওয়ার বিনিময়ে রাখাল থাকতেন। এরপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচয় হয়ে ওঠে একজন দিনমজুর হিসেবে। সেই থেকে শুরু। টানা ৪০ বছর দিনমজুরের কাজ করেও ভাগ্য বদলায়নি আতাব আলীর। অভাবের কারণে সংসার ছেড়ে চলে যায় তার প্রথম স্ত্রী। আত্মহত্যা করেছে বড় ভাই।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের শ্রীবাড়ী গ্রামের আতাব আলীর বাবা নোয়াব আলীও দিনমজুর ছিলেন। একই পেশার মানুষ ছিলেন তার দাদা আইজুদ্দিনও। তারা কেউ আর জীবিত নেই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা রোজগার করেছেন তা দিয়ে কোনোমতো সংসার চালিয়ে গেছেন তারা। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে আতাব আলী মেজো। তার বড় ভাই এয়াকুব আলী সংসারে অভাব-অনটনের কারণে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। ছোট ভাই কিতাব আলীও পেশায় দিনমজুর।
আতাবের কোনো ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ে। বড় মেয়ে খোদেজাকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজে দিয়েছিলেন। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য তুলে চার বছর আগে তার বিয়ে দিয়েছেন। চরম দারিদ্রের মধ্যে বড় হচ্ছে ছোট মেয়ে দুটি।

বাপ-দাদা অন্যের জমিতে বসবাস করে জীবন পাড় করেছেন। বড় ভাই আর ছোট ভাই মিলে ৮ শতাংশ জমি কিনলেও টাকা দিতে পারেননি আতাব আলী। এজন্য আতাবের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। ভাইদের জমির এক কোণে ঘর তুলে বসবাস করেন। আতাবের দ্বিতীয় স্ত্রী মাঝে মধ্যে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতটি টিনের ছাপড়া ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন আতাব আলী। ঘরের ভেতরে ঢুকেই সহজে অনুমান করা যায় দারিদ্রের সর্বনিম্ন স্তরে বসবাস তার। বর্ষায় দিনমজুরের কাজ নেই। তাই বড়শি দিয়ে দিনভর মাঝ ধরেন আতাব আলী। মাছ বিক্রি করে যা পান তাই দিয়ে এখন সংসার চলে।
আতাবের স্ত্রী জানান, তার স্বামী প্রতিদিন যে কয় টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। এজন্য সন্তানদের কোনো চাওয়া পূরণ করতে পারেন না। কোনোমতে দু’বেলা খেয়ে বেঁচে আছেন তারা।
আতাব আলী বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি পয়সা রোজগারের জন্য। যাতে সংসার চালাতে পারি। কিন্তু আমার এই কষ্টের শেষ হচ্ছে না। নিজের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। এক শতাংশ জমিও কিনতে পারলাম না। ভাঙ্গা ঘরে থাকি সেটা মেরামত করারও সার্মথ্য নেই।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোনো ছেলে সন্তানও নেই যে শেষ বয়সে সংসারের হাল ধরবো।
এ কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে আসে আতাব আলীর। তিনি বলেন, আপনি তো আমার কথা তবু শুনলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের কথাও কেউ শুনতে চায় না।
বড়টিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেম জানান, দিনমজুর আতাব আলী মানুষ হিসেবে খুবই সহজ-সরল। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসার চালানঅ কখনও কোনো অন্যায় কাজে জড়িত হননি। কোনো ভাতার আওতায় আনা না গেলেও আতাবকে বিভিন্ন সময় সরকারি সহায্য-সহযোগিতা দেয়া হয় বলে জানান চেয়ারম্যান।
আরএআর/জেআইএম