সন্তান হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কায় পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২০

মৌলভীবাজারের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের বিচার দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এনিয়ে নিহতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ দুই বছরেও আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পিবিআই। রাজনৈতিক প্রভাবে বিচার কাজকে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নিহতদের পরিবারের।

২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর গ্রুপিং দ্বন্দ্বে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও তার কর্মী নাহিদ আহমদ মাহি।

এ ঘটনায় নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী মৌলভীবাজার মডেল থানায় ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়েরের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মামলাটি এখনও কোনো কূল-কিনারায় পৌঁছায়নি।

পুলিশের দেয়া চার্জশিটে বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলা এখন তদন্ত করছে পিবিআই। সব আসামিরা জামিনে আছেন। অভিযুক্তদের কেউ কেউ বিদেশেও চলে গেছেন।

নিহত শাবাব মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক ও সেলিনা রহমানের ছোট ছেলে। আর মাহি সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া ও জুলেখা বেগমের ছেলে।

ছেলে হারানোর শোকে এখন কাতর দুটি পরিবার। আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় শাবাবের পরিবার থেকে তার মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করলেও নিহত মাহির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা দায়ের করেনি।

নিহত শাবাবের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এত বড় চাঞ্চল্যকর ঘটনার পিছনে কে বা কারা কলকাঠি নাড়ে কিছু বুঝছি না। কোনো সঠিক বিচার পাব কি না সেটাও বুঝছি না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।

তিনি বলেন, দুজন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর হলো আবার ওই দিনে রিমান্ড কেন্সিলও হয়েছিল, এটা কী? আবার দুই আসামি বিদেশেও চলে গেছে। এসব কিভাবে সম্ভব। আমরা চাই যারা দোষী তাদের বিচার হোক। যাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে আর কেউ সাহস না করে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত শাবাবের সঙ্গে তুষার গ্রুপের বিরোধের কারণেই তুষার শাবাবকে হত্যার চেষ্টা চালান। ঘটনার ১০-১২ দিন আগে মাহির সাথে তুষার গ্রুপের ফাহিমের ঝগড়া হয়। বিষয়টি মিমাংসা করার জন্যই ঘটনার দিন ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শাবাব ও মাহিকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাস এলাকায় ডাকা হয়।

সেখানে তুষার গ্রুপ শাবাব ও মাহিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা তাদের বন্ধু ও পথচারীরা গুরুতর আহত শাবাব ও মাহিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মাহির মামা ইমরান আলী বলেন, আসামিরা জামিনে বের হয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে তাদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। দুই ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার আসামিকে যদি নেতারা প্রশ্রয় দেন এর চেয়ে বেদনার আর কী আছে? আমরা সব কিছু নিয়ে হতাশ।

পুলিশ জানায়, রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের একবছর পর আদালতে চার্জশিট দায়ের করেন মডেল থানার তৎকালীন ওসি সোহেল আহাম্মদ। তিনি তুষারসহ ১০ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন। কিন্তু বাকি দুই আসামিকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত না করায় বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলা পিবিআইতে পাঠান আদালত।

এ ব্যাপারে পিবিআই মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ বলেন, বাদী দুই আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়ায় আদালতে নারাজি জানান। আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত পেয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়েছেন ও যাবতীয় কার্যকলাপ সম্পূর্ণ করেছেন। অচিরেই মামলাটির পুলিশি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।

রিপন দে/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।