অরক্ষিত কাঠিপাড়া গণকবর, মেলেনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতিও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার কাঠিপাড়া গণহত্যা দিবসের ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলে আজও অরক্ষিত রয়েছে গণকবরগুলো। স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের অবস্থা দেখার কেউ নেই।

উপজেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি কাঠিপাড়া গণকবর। ২০১০ সালে এ গণকবর খুড়ে ২৫ শহীদের মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৭ মে একই পরিবারের ২০ জনসহ ৫০ জনেরও বেশি নিরীহ বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

কাঠিপাড়া গ্রামে ১৯৭১ সালের মে মাসে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। এসময় জীবন রক্ষার্থে বেশ কিছু সাধারণ মানুষ জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। ১৭ মে সকালে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক দৌঁড়ে ওই জঙ্গলে পালানোর সময়ে তা পাকবাহিনীর নজরে পড়ে। এসময় জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া নারী-পুরুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পরে স্থানীয়রা একটি খালের মতো গর্ত করে নিহতদের চাপা দিয়ে রাখেন।

চাপা পড়া কাঠিপাড়া গ্রামের নিহতদের নাম শনাক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম সরফরাজ টিনের একটি সাইনবোর্ড সুপারী গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেন। বর্তমানে এতে নামগুলোও স্পষ্ট বোঝা যায় না।

এছাড়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারীদের নাম শনাক্ত করা হলেও তাদেরকে দেয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।

কাঠিপাড়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধকালে নিহত জীতেন্দ্র নাথ বড়ালের ছেলে শান্তি রঞ্জন জানান, বি.এ পাশ করেও বেকার ঘুরে বেরাচ্ছি। বর্তমানে পাঁচ সদস্যের পরিবারের বোঝা তাকেই বহন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে তার ছোট ভাই সত্য রঞ্জন বড়াল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সরকারের কাছে তার আবেদন যাতে সকল শহীদ পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান।

আত্মদানকারী সতীশ চন্দ্র হালদারের পুত্র স্বপন কুমার জানান, ছোট বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে বাবাকে হারাতে হয়েছে। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ডে বাবার নাম থাকা ছাড়া আর কোন রাষ্ট্রীয় সুবিধা তারা পাননি। বর্তমানে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকু পেলেও বাবার আত্মা শান্তি পেতো।

jagonews24

স্থানীয়রা জানান, ২০১০ সালে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়লে একবার গণহত্যা দিবস হিসেবে ২০১১ সালের ১৭ মে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা পরিষদ থেকে একটি গেট এবং তারকাঁটার বেড়ার ব্যবস্থা করা হলেও সেখানেও মরিচা ধরেছে। শুধু ইট-সিমেন্টের তৈরী গেটটি এতিমের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলী মৃধা জানান, একাত্তরের স্মৃতি আর শোকগাথা এ বধ্যভূমি কালের গর্ভে হারাতে বসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ঝালকাঠির রাজাপুরের মুক্তিকামি জনতাও দেশের জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিল। একাত্তরের নয় মাস এখানে গণহত্যা, লুট আর নারী নির্যাতনসহ হানাদারবাহিনী নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম নান্নু জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে কাঠিপাড়া বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা প্রয়োজন। আর এজন্য সরকার এগিয়ে আসবে এ প্রত্যাশা দীর্ঘ দিনের।

তবে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে গেলেও কাঠিপাড়ার এ বধ্যভূমি সংরক্ষিত হয়নি। সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ।

আতিকুর রহমান/এসএমএম /এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।