সালেমের বোবা কান্না

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ১১:৩৯ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২১

মো. সালেম, বয়স ৫০ বছর। গলায় ক্যানসার হওয়ায় কৃক্রিমভাবে শ্বাস নিতে পারলেও হারিয়েছেন কথা বলার ক্ষমতা। এখন নিজের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ এবং ছেলেরে দেনা পরিশোধের চাপ নিয়ে প্রতিদিনই এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন তিনি।

তবে কথা না বলতে পারায় অপরিচিত কাউকে নিজের কষ্টের কথা খুলে বলতে পারছেন না। এরপরও হাতের ইশারায় মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। এতেও খুব একটা কাজ হয় না। ফলে ঘরে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনেক সময় না খেয়েই দিন কাটাতে হয় তার।

jagonews24

মো. সালেম ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ছোট আলকী গ্রামের দরবেশ আলী ব্যপারী বাড়ির মৃত সামছুল হকের ছেলে।

তার ছোট ছেলে নবম শেণি পড়ুয়া মো. রাছেল বলে, আমরা এক বোন ও দুই ভাই। বাবা র্দীঘ দিন ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। গত ১০/১২ বছর আগে বড় বোনকে ধার-দেনা করে বিয়ে দেন। দিন-রাত রিকশা চালিয়ে ওই দেনা পরিশোধ করেন। আবার গত চার বছর আগে আমার বড় ভাই মো. রুবেলকে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে মোটা সুদে টাকা ধার করে ওমান পাঠান। কিন্তু ওমান গিয়ে ভালো কাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েন তিনি। শুরু হয় দেনাদারদের চাপও। নিরূপায় হয়ে বাবা আবারও রিকশা চালানোর পাশাপাশি দিন মজুরের কাজ শুরু করেন।

jagonews24

সে আরও বলে, বাবা ও ভাই মিলে গত চার বছরে ২ লাখ টাকা দেনা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রায় এক মাস আগে বাবার গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। গলায় একটি প্লাস্টিকের পাইপ দ্বারা কৃক্রিমভাবে শ্বাস নেন তিনি। কথা বলতে পারেন না। আমাদের কাউকে যদি ডাকেন তখন হাতের তালি বাজিয়ে ডাকেন। এখন আর তিনি রিকশা চালাতে পারেন না। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারেননি বড় ভাই। শুনেছি সেও ঠিকমত খেতে পারেন না আর দেনা পরিশোধের টাকাও পাঠাতে পারেন না।

রাছেল বলে, বাবার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করলেও কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমানে আমাদের সংসারে আয় করার কোনো লোক নেই। প্রতিদিন বাবার ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। কিন্তু সেই ওষুধ কেনার টাকা নেই। গত এক মাস ধরে আমরা ঠিকমতো খেতেও পারি না। পরে বাধ্য হয়ে বাবা বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারে গিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে তা দিয়ে কোনোরকম দু-এক বেলা খেয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না।

jagonews24

এদিকে টাকার অভাবে রাছেলের পড়াশোনাও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ও সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার। স্থানীয়রাও একই কথা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা আগে শুনিনি। সালেমের পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে এসে আবেদন করলে চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে কিছু টাকা দেয়া হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।