শহরে বাধ্য হলেও গ্রামে বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২১

দেশে করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মাঝে এখনও রয়েছে চরম অনীহা। মানিকগঞ্জে শহরের তুলনায় গ্রামীণ জনপদের মানুষের মাঝে সচেতনতার ঘাটতি অনেক। এখনও গ্রামের মোড়ে মোড়ে কিংবা হাট-বাজারের চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা। মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।

শহর থেকে গ্রামে সবখানেই করোনা দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়লেও জেলার অনেক এলাকাতেই গা ছাড়া ভাব জনপ্রতিনিধিদের। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করতে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাঠে থাকার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অনেকেই দায়সারা মাইকিং অথবা কয়েকটি মাস্ক বিতরণের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেই দায়িত্ব সারছেন বলে অভিযোগ অনেকের।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের কাতরাসিন গ্রামে তিনদিন আগে করোনায় মারা গেছেন এক ব্যক্তি। ওই গ্রামে আক্রান্ত আরও বেশ কয়েকজন। অথচ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেল গ্রামের মানুষের মাঝে এখনো সচেতনতা বাড়েনি। মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দোকানে খোশগল্প করছেন জড়ো হয়ে। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে নানা অজুহাত দেখান তারা।

jagonews24

একই উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের জমদুয়ারা বাজারে গিয়ে দেখা গেল চায়ের দোকানে ১০-১৫ জন মানুষ জড়ো হয়ে চা, পান খাচ্ছেন। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। সাধারণ মানুষের সঙ্গে চায়ের দোকানে পাওয়া গেল স্থানীয় ইউপি সদস্যকে তোফাজ্জল হোসেন তোতাকেও।

চায়ের দোকানে গায়ে গা লাগিয়ে বসে উপজেলার মাগুরাইল বাজারে টেলিভিশনে সিনেমা দেখছিলেন ১০-১৫ জন। সামাজিক দূরত্ব মানাতো দূরের কথা বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিল না। কথা বলতে এগিয়ে যেতেই যার যার মতো কেটে পড়েন। এই বাজারের বিভিন্ন দোকান ও অলিতে গলিতে প্রায় শতাধিক মানুষ পাওয়া গেল।

দৌলতপুর উপজেলার রৌহা বাজারের চিত্রও একই। দুপুর আড়াইটার দিকে উপস্থিত হয়ে দেখা গেল চায়ের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড়। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। বালাই নেই সামাজিক দূরত্ব মানার। ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখে অনেককেই পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরতে দেখা যায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে সচেতনতা কম। জেলা ও উপজেলা শহর এবং এর আশপাশের এলাকাগুলো প্রশাসনের দৃষ্টিতে থাকায় মানুষ সরকারি নির্দেশনা মানতে বাধ্য হন। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে প্রশাসনের অভিযান না থাকায় সেখানকার মানুষ নিয়ম না মেনে অবাধে চলাফেরা করছেন। তাদের মঝে নেই করোনাভীতি।

jagonews24

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার পর মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মধ্যে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এই দুর্যোগে মানুষকে সচেতন করাসহ শক্তি সাহস যোগানো তাদের কাজ হলেও অনেক এলাকাতেই মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাযর্ক্রম দেখা যাচ্ছে না। মাঠে নেই বেশিরভাগ উপজেলা চেয়ারম্যানও।

তবে বিভিন্ন এলাকায় করোনা সচেতনতায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করাসহ চেয়ারম্যান-মেম্বাররা মাস্ক বিতরণ করেছেন। অনেকেই আবার নামমাত্র মাস্ক বিতরণ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দায় সারছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মানিকগঞ্জের তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোতা জানান, নিজেদের জীবনেরও তো একটা নিরাপত্তা আছে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটুকু সম্ভব মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি। প্রতিটি এলাকাতেই মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।

শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, এটা বাস্তব সত্য যে আমরা শত চেষ্টার পরও এক শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে আমি আমার এলাকায় জোরেসোরে মাইকিং করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে যারা স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারি নির্দেশনা মানবে না তাদের জন্য পরিষদের সকল সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমীন আখন্দ জানান, জেলায় প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও মানুষের মাঝে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে জেলায় সংক্রমণের হার আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। করোনা থেকে বাঁচতে সবার আগে ব্যক্তি সচেতনতা জরুরি।

তিনি আরও জানান, এ পযর্ন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগী শনান্ত হয়েছে ২ হাজারেরও বেশি।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।