ঘাটে এসে আটকা পড়ল হাজারো যাত্রী, বাধ্য হয়ে ছাড়ল ফেরি
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় শনিবার (৮ মে) সকাল থেকে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে। এ সময় ঘাটে আটকা পড়ে নারী-শিশুসহ হাজারো মানুষ । তারা ঘাটে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। একপর্যায়ে যাত্রীরা বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাদের রোষানলে পড়েন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও ফেরি সংশ্লিষ্টরা।
পরে আটকা পড়া যাত্রীর চাপ সামাল দিতে দুপুর ১টার পর থেকে সীমিত আকারে ছয়টি ছোট ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। পরে বিকেল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।
সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, লকডাউনে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঈদে বাড়ি ফিরছেন হাজারো মানুষ। রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে আসা এসব মানুষ ফেরি বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ঘাটে এসে পড়েন বিপাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। নদী পারের জন্য তারা এ ঘাট থেকে ও ঘাটে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।
সকালের দিকে পাটুরিয়া ঘাটে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু সেটিও বেশিক্ষণ চলেনি। পুলিশি তৎপরতায় সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে ট্রলার চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ৯টার দিকে পাটুরিয়া ২ নম্বর ঘাটে একটি মরদেহসহ কয়েকটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পারের অপেক্ষায় আটকা থাকে। মাধবিলতা নামে একটি ছোট ফেরি দিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলো পারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘাটে ফেরি ভিড়তে দেখেই শত শত মানুষ পন্টুনে জড়ো হন। এ অবস্থা দেখে ফেরিটি ঘাটে ভিড়েনি।
এরপর ৩ নম্বর ঘাটে শাহ আলী নামে একটি রো রো ফেরি ভিড়লে স্রোতের মতো মানুষ উঠে। পুলিশ মাইকিং করে তাদের ফেরি থেকে নামতে অনুরোধ করলেও যাত্রীরা ফেরি থেকে নামছিলেন না। পরে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা ও শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ কবিরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাদের ফেরি থেকে নামতে বাধ্য করেন।
এ সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীরা যাত্রীদের ছবি তুললে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের রোষানলে পড়েন কয়েকজন টিভি সাংবাদিক ও ফেরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে ফেরি ঘাটে হাজারো যাত্রী প্রচণ্ড রোদ ও গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। খোলা আকাশের নিচে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারের অপেক্ষায় থাকেন তারা। অনেক শিশু ও বয়স্ক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘাটে খাবারের দোকান বন্ধ, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই টয়লেটেরও। এ কারণে নারী-শিশুদের দুর্ভোগ ছিল সবচেয়ে চরমে। একই সঙ্গে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান জানান, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি মালামাল বোঝাই যানবাহন পারাপারের জন্যই সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করছে। এর মধ্যেও অনেক যাত্রী পারাপার হচ্ছে। বিকেলের পর থেকে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
বি.এম খোরশেদ/এসজে/জিকেএস