যেভাবে আলোচনায় কাকলী ফার্নিচার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২৫ মে ২০২১

‘দামে কম মানে ভালো, কাকলী ফার্নিচার’, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে এই স্লোগান। ভিডিওর উৎস এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ও সেখানে কী ধরনের ফার্নিচার পাওয়া যায় তা জানতে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় মানুষের মাঝে। ভাইরাল হওয়া এক মিনিটের ভিডিওচিত্রটির কোত্থেকে প্রথম প্রচারিত হয়েছিল, কারাই বা এটি নির্মাণ করেছিলেন, কীভাবে এটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ল ইত্যাদি জানতেও মানুষের ছিল ব্যাপক আগ্রহ।

জাগো নিউজের অনুসন্ধানে মিলেছে সেই কাকলী ফার্নিচার এবং এর মালিকের সন্ধান।

দোকানটির অবস্থান গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় শ্রীপুর সড়কে। দোকানটির মালিক শখ করে এক মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র তার ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন গত ৯ এপ্রিল। এরপর তার অগোচরেই সেটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

ভিডিওর আদ্যোপান্ত জানার আগে কাকলী ফার্নিচারের ইতিহাস জেনে আসা যাক।

jagonews24

প্রায় ২০ বছর আগে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তার শ্রীপুর সড়কে ছোট্ট পরিসরে কাঠের ফার্নিচারের ব্যবসা শুরু করেন মো. আবুল কাশেম নামে এক ব্যবসায়ী। ছোট মেয়ে কাকলীর নামে নামকরণ করা হয় দোকানের। পরে ব্যবসার হাল ধরেন তার ছেলে এসএম সোহেল রানা। বোন কাকলীর স্বামী মো. আমান উল্ল্যাহ্কে সঙ্গে নিয়ে কাঠের ফার্নিচারের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক আসবাবপত্র নিয়ে নতুন উদ্যোমে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন তিনি।

গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা, ময়মনসিংহ শহর ও ভালুকার স্কয়ার মাস্টারবাড়িতে রয়েছে তাদের তিনটি শো-রুম। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম সোহেল রানা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবেও কর্মরত।

তিনি জানান, গত ৯ এপ্রিল কাকলী ফার্নিচারের মাওনা চৌরাস্তা শোরুমে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন এক নারী। সঙ্গে ছিল তার দুই মেয়ে মাইশা ও আতিকা।

jagonews24

ওই দুই শিশুকে মডেল বানিয়ে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচারের বুদ্ধি খেলে যায় সোহেল রানার মাথায়। ওই দুই শিশুকে ‘দামে কম, মানে ভালো কাকলী ফার্নিচার’ স্লোগানের সঙ্গে দোকানের একটি সোফা সেটের ওপর উঠে লাফাতে বলা হয়। পরে তিনি মুঠোফোনে এক মিনিটের একটি ভিডিওচিত্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। এরপর কেটে যায় ৯ দিন। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল।

হঠাৎই ১৮ মে বিকেল থেকে তার মোবাইল ফোনে একের পর এক কল আসতে শুরু করে। ফোন করে সবাই শুধু একটি কথাই বলছিলেন, ‘দামে কম, মানে ভালো কাকলী ফার্নিচার’। এরপর তিনি সেই পোস্টে ক্লিক করে দেখতে পান, ভিডিওটি দেখেছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।

jagonews24

মজার ব্যাপার হলো দেশের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, তার কাছে ফোন আসতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও। সেখানে কাকলী ফার্নিচারের শোরুম খোলার দাবি জানান ওপার বাংলার মানুষ। ট্রল বা মিম যা-ই করা হোক বাংলাদেশের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে নিয়ে অনলাইনে এই ব্যাপক আলোচনায় তিনি অভিভূত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যমও ফোন করে তার অনুভুতি ও তার কাকলী ফার্নিচার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

আর দুই বাংলাতেই কাকলী ফার্নিচার নিয়ে ট্রল ও মিমে মেতে ওঠে অনলাইন। পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার, এই সময়, জি-২৪ ঘন্টাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কাকলী ফার্নিচারকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

jagonews24

এ বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, আমরা পারিবারিকভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘দামে কম, মানে ভালো কাকলী ফার্নিচার’ স্লোগানটি ব্যবহার করেছি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞাপনটি আমার নিজের মোবাইল ক্যামেরায় কোনোমতে বানানো। তবে যারা যেভাবেই নিক না কেন, কাকলী ফার্নিচার এখন এপার বাংলা-ওপার বাংলার সবার মুখে মুখে। এটাই আমার বড় পাওয়া।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামি-দামি ব্রান্ডের বোর্ড কিনে নিজস্ব ডিজাইনার দিয়ে বাড়ির পাশে কারখানায় ঘর ও অফিসের আসবাব বানাই। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত এসব আসবাবপত্র বাজারে অন্যান্য আসবাবপত্রের তুলনায় দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।’

মো. আমিনুল ইসলাম/এসএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।