মাগুরায় বিলুপ্তির পথে প্রাণজুড়ানো হাতপাখা
‘তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে/কিছু সময় আরও তুমি থাকো আমার পাশে/থাকো আমার পাশে—গানপাগল শ্রোতারা আজও ভুলে যায়নি শ্রমিকশিল্পী আকবরের গাওয়া এই বিখ্যাত রোম্যান্টিক গানটি। তবে প্রচণ্ড গরমে দেহ-মনে শান্তির পরশ বোলানো বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালপাখা আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এখন মাগুরা জেলা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
আবহমানকালের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তালের পাখা। চৈত্র-বৈশাখ মাসে তীব্র দাবদাহ শুরু হলেই মনে পড়তো তালের পাখার। আর প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে গরমকাল আসা মানেই হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়া। এটা যেন তাদের পরম বন্ধু। তবে মাগুরায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই হাতপাখা।
মাগুরা সদর হাসপাতালের সামনে হাতপাখা বিক্রেতা আরজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগেও তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি হাতপাখা বিক্রি করতেন। গরমকালে যা বেচাকেনা করতেন তা দিয়ে সারাবছর ভালোই চলত। কিন্তু বর্তমানে হাতপাখার দাম বৃদ্ধি পেলে বেচাবিক্রি কমে গেছে। এখন এমন দিনও আছে যেদিন একটি পাখাও বিক্রি হয় না।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎখাতকে সরকার গুরুত্ব দেয়ায় বিদ্যুৎবিভ্রাট নেই বললেই চলে। এজন্য তাদের এখন আর আগে মতো হাতপাখার প্রয়োজন হয় না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এটা আর কেনা হয়ে ওঠে না।
তবে তালপাতার হাতপাখা সব জায়গায় পাওয়া যায় না বলে তিনি অভিযোগ করেন। এছাড়া প্লাস্টিকের হাতপাখাগুলো ব্যবহার সহজ ও দামেও কম বলে এখন আর তালপাতার হাতপাখা ক্রেতারা কিনতে চান না বলে জানান তিনি।
হাতপাখার কারিগর আব্দুল ওয়াহাব জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাঁচামাল সঙ্কট ও মুনাফা কম হওয়ায় এই পেশাও পাল্টে ফেলছেন তালপাখার কারিগররা। যারা এখনো এ পেশায় আছেন তাদের অবস্থা ভালো নয়। কোনো রকমে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তারা।’
এ বিষয়ে মাগুরা বণিক সমিতির আহ্বায়ক মো. হুমায়ুন কবীর রাজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইদানীং প্লাস্টিক ও বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি আধুনিক সামগ্রীর একচ্ছত্র বাজারে তালপাখা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে যতই আধুনিক সামগ্রী সহজলভ্য হোক না কেন, তালপাখার শীতল পরশ আর কিছুতে পাওয়া যায় না।’
আরাফাত হোসেন/এসআর/জিকেএস