তালগাছের গ্রাম সাতঘরিয়া

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ০৬ জুন ২০২১

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’ কবিতার আকাশ ছুঁই-ছুঁই আর সারি-সারি তালগাছের দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।

তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাতঘরিয়া এর ব্যতিক্রম। এটি যেন তালগাছের গ্রাম। সড়কের দুই পাশ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলে পরিবেশ বান্ধব এ গাছ। ছোট-বড় তালগাছে ঘেরা মনোমুগ্ধ পরিবেশ যে কাউকে আকৃষ্ট করে। আর এ দৃশ্যটি ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমী মানুষ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভারতের সীমান্তঘেঁষা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের সাতঘরিয়ায় গ্রাম। এ গ্রামের সড়কের দুই পাশে সারি সারি তালগাছ। দৃষ্টিনন্দন সেই সড়কে ছবি তুলছেন কয়েকজন প্রকৃতি প্রেমী।

এ সড়কে পাশের জেলা ফেনী এসেছেন থেকে এসেছেন মো. শাহীন আলম নামের এক যুবক। তিনি বলেন, সড়কের দুই পাশে অগণিত তালগাছ সাতঘরিয়া গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। যা দেখতে আমাদের এখানে ছুটে আসা। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি দৃশ্য।

মো. অলি উল্লাহ নামে সাতঘরিয়া গ্রামের আরেক যুবক বলেন, আয়তনের দিক থেকে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নে আমাদের গ্রামটি বড়। এর প্রতিটি সড়কের দুই পাশে বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব সারি-সারি তালগাছ লাগিয়েছে বাপ-দাদারা। এমনকি বাড়ির আঙিনাতেও রয়েছে ছোট-বড় তালগাছ।

jagonews24

সত্তর বছরের সাতঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুর রহমান মোল্লা। তিনি বলেন, এ গ্রামে আদিকাল থেকেই আমরা তালগাছ রোপণে যেমন আগ্রহী ছিলাম বর্তমান প্রজন্মও এর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সারি সারি তালগাছে যেমন গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বজ্রপাত) মোকাবিলাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জেলার ১৭ উপজেলায় ৫০ হাজার তালের বীজ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব বীজ সড়কের পাশে না লাগিয়ে ফসলি মাঠের আইলে লাগানো হবে।

তিনি বলেন, তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব। নির্বিচারে এ গাছ উজাড় করার ফলে বর্তমান সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। মাঠে কৃষকদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে কৃষি বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি অর্থ বরাদ্দ পেলে আগামী বছর এক লাখ বীজ রোপণ করা হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, তালগাছ রোপণে সরকারিভাবে কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। তারপরও জনস্বার্থে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ফাণ্ড থেকে গত বছর এক হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। এবছরও কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক হারে তাল ও খেজুরের বীজ রোপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।