নারিকেল পাতার ঘরটিই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একমাত্র সম্পদ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ০৬ জুলাই ২০২১

একটি বসতভিটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি বাঁশের খুঁটি। চারদিকে খোলা। তবে খুঁটির ওপর নারিকেল পাতা ও প্লাস্টিক দিয়ে একটি ছাউনি রয়েছে। প্লাস্টিকটাও প্রায় ছিঁড়ে গেছে। ভেতরে ভাঙা কাঠের ওপর পড়ে আছে দীর্ঘদিনের পুরোনো পোশাক। যাকে একটি ঘর বলাও মুশকিল। কিন্তু এটিই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ঘর।

দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম শেষে এই ভিটেই ছিল তার শেষ জীবনের প্রাপ্তি। তার পরিবারের থাকার জায়গাও এটি। এরপরও অসচ্ছল এই পরিবারকে সরকারি ঘর বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা পূর্ববানিয়ারী গ্রামের ফজলুর রহমানের জীবদ্দশা কেটেছে অসচ্ছলভাবে। তার ভাগ্যে জোটেনি একটি ভালো ঘর। বর্তমানে ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

ফজলুর রহমান রেখে গেছেন এক ছেলে ও তিন মেয়ে। যদিও মেয়েরা বিবাহিত। জীবিকার তাগিদে ছেলে শফিকুল তার মাকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকছেন। সেখানে প্রাইভেট টিউশনি করে জীবন চালাচ্ছেন। অসচ্ছলতার কারণে তিনিও ঘরটি মেরামত করতে পারেননি। তবে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসলে এ ঘরেই থাকতে হয় তাদের।

সরকার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দ্বিতল ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। অথচ সেই ঘর পাওয়ার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে ফজলুর রহমানের পরিবারকে। সরকারি একটি ঘর পাওয়ার জন্য তারা ধরনা দিচ্ছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের মেয়ে সেলিনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বিতরণ তালিকা প্রণয়নে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও আমার বাবার নামটি তালিকায় স্থান পেয়েও কী কারণে বাদ পড়েছে, তা জানি না। আমার পরিবার এক প্রকার খোলা আকাশের নিচে আছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিববর্ষের একটি ঘর পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

প্রতিবেশী আবু সাইদ হাওলাদার ও লোকমান হাকিম হিরু বলেন, ‘এ উপজেলায় এ পরিবারের চেয়ে গরিব আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা আছেন কিনা আমার জানা নাই। তবুও কোনো এরা ঘর পেলেন না তা আমার জানা নাই।’

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, ‘আমি সব বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করে তালিকা করেছি। ইউএনও ও জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, নাজিরপুরে মুক্তিযোদ্ধারা ঘর পেলে ফজলুর রহমানের পরিবার যেন পায়। তবে তালিকা থেকে তার নাম কীভাবে বাদ পড়ল, আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ. লতিফ বলেন, ‘উপজেলায় ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। একসঙ্গে সবাইকে ঘর দেয়া সম্ভব নয়। মাত্র ছয়ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে আমি বেঁচে থাকলে আগামী তালিকায় ফজলুর রহমানের পরিবার ঘর পাবে।’

মেহেদী হাসান/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।