আদর-যত্নে বড় করা ‘পর্বত’কে বিক্রির কথা শুনে কাঁদছে মৌলি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ০৬ জুলাই ২০২১

বাড়িতে জন্ম নেয়া গরুর বাছুরটি তিন বছরে দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেছে। ছোট্ট মৌলির (৯) কাছে এ যেন পর্বতসমান। তাইতো আদর করে নামও রেখেছে ‘পর্বত’।

বাড়ির একমাত্র মেয়ে মৌলি ‘পর্বতের’ গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে সে চোখ বন্ধ করে থাকে। সামনে ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে ‘পর্বতকে’ বিক্রির কথাবার্তা হচ্ছে পরিবারে।

গরুটি বিক্রির কথা শোনার পর থেকেই কান্না শুরু করেছে মৌলি। তার প্রশ্ন কেন পর্বতকে বিক্রি করা হবে। শুধু মৌলি নয়, তার মা জেসমিন আক্তারেরও মন খারাপ গরুটি বিক্রির কথা শুনে।

প্রায় ৩০ মণের কাছাকাছি ওজনের ষাঁড় ‘পর্বতের’ মালিক মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের হাটপাড়া গ্রামের মহিরুল ইসলাম। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গরুটি বিক্রি করতে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি। কুচকুচে কালো গরুটির সুঠাম শরীর, বিশাল আকার। একে দেখতে মহিরুলের বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছে মানুষ। ঈদ আসন্ন, তাই যতদ্রুত সম্ভব গরুটিকে বিক্রি করতে চান মহিরুল। কিন্তু লকডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মহিরুলের বাড়িতে জন্ম হয় পর্বতের। ছোট্ট বাছুরটিকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই লালন-পালন শুরু করেন বাড়ির সবাই। পর্বতকে ভৈরব নদের তীরে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় মৌলি। কেবল মৌলি ডাকলেই মাথা নেড়ে সাড়া দেয় সে। মসৃণ শরীর, দেখতে সুন্দর ফ্রিজিয়ান প্রজাতির এই গরু গরম সহ্য করতে পারে না। এ কারণে গোয়ালঘরে লাগানো হয়েছে বৈদ্যুতিক ফ্যান।

jagonews24

মহিরুল ইসলাম বলেন, পর্বতের পাঁচবেলা খাবার তালিকায় ঘাসের পাশাপাশি থাকে আখের সবুজ ঘাস, ওরস্যালাইন, ভুসি, বিচালি, গুড়ের শরবত, ভুট্টা ও খৈল। সকাল-সন্ধ্যায় গোসল করানো, সময়মতো খাবার দেয়া, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে মশারি টানানো, গরমের সময় শরীর শীতল রাখতে বাতাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিন বছরে গরুটির ওজন হয়েছে প্রায় ৩০ মণ।

মহিরুল জানান, সকালে গোয়ালঘর থেকে বের করে উঠানে মোটরের পানিতে সাবান দিয়ে গোসল করানো হয় পর্বতকে। তার একমাত্র মেয়ে মৌলি তাকে ‘পর্বত’ নামে ডাকে। ডাকলে কান নেড়ে সাড়া দেয়।

পর্বতের দাম ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তাকে কিনতে এলাকার অনেক ব্যাপারি যোগাযোগ করছেন। এ কথা শোনার পর থেকে মহিরুলের মেয়ে মৌলি ও স্ত্রী জেসমিন আক্তারের মন খারাপ।’

মহিরুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, ‘সকালে রুটি তৈরির সময় পর্বত ডাকাডাকি শুরু করে। গোয়ালঘর আর রান্নাঘর পাশাপাশি হওয়ার কারণে পর্বতের ডাকাডাকি শুনে অস্থির হতে হয়। প্রথম রুটিটি দ্রুত তৈরি করে আগে পর্বতকেই খাওয়ানো হয়। সন্তানের মতো লালন-পালন করে চোখের সামনে এতো বড় হয়েছে। বিক্রি করার কথায় মনটা বেশ খারাপ।’

আসিফ ইকবাল/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।