পানির দরে চামড়া, লোকসানের ভয়ে কিনছেন না ব্যবসায়ীরা
গত তিন বছর ধরে কোরবানির গরুর চামড়া পানির দরে বিক্রি হয়েছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে। এবারও গরু ও ছাগলের চামড়ার দাম কম থাকায় অনেকেই বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসায় দান করে দিয়েছেন। কেউ কেউ ছাগলের চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন, কেউ কেউ মাটিতে পুতে দিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, কোরবানির চামড়া কিনতে মৌসুমি ব্যাপারীদের কোনো আগ্রহ নেই। অনেকেই গরুর চামড়া ৪০-৫০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেলা গড়িয়ে এলে ফ্রিতেও চামড়া কিনতে চাননি ব্যবসায়ীরা।
ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের নুর ইসলাম অভিযোগ করেন, তার ৫০ হাজার টাকার গরুর চামড়া কেউ কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে করে তিনি বিপাকে পড়েন।
উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের মতিন মিয়া পাঁচটি বড় গরুর চামড়া অনেক কষ্ট করে ১০০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান।
চামড়ার দাম এত কমের পেছনে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিবছরই ধার দেনা করে চামড়া কিনেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সময় মতো বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন না ট্যানারি মালিকরা, এতে করে লোকসানের পাশাপাশি ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণেও ধস নেমেছে চামড়া ব্যবসায়। ফলে তহবিল হারিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের লবণ ও চামড়া শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসা থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্য দেশীয় বাজারে চামড়ার চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
উপজেলার বাছিরগঞ্জ বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী জন্টু মিয়া জানান, আমানত হারানোর ঝুঁকি ও বকেয়া টাকা থাকা সত্ত্বেও তিনি ৩০০-৪০০ চামড়া কিনেছেন যা লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেবেন। পরবর্তীতে চামড়ার বাজার ভালো হলে তিনি ঢাকাতে পাঠিয়ে বিক্রি করবেন।
সুতাং বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন ২০০ গরুর চামড়া কিনেছেন। তিনি গাড়িতে করে বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তিনি বলেন, ‘লাভ হবে না লস হবে জানি না। তবে শঙ্কা নিয়েই বিক্রির জন্য বের হয়েছি। দেখা যাক কি হয়।’
এভাবে দিনদিন চামড়ার দামে অধঃপতন হতে থাকলে এদেশে চামড়া শিল্প হুমকির মুখে পড়বে এবং এ পেশায় জড়িতরা বেকার হয়ে পড়বেন। তাই সরকারি দর অনুযায়ী মফস্বলে ও চামড়া কেনার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক শাহ মো. নজরুল ইসলাম জানান, গরুর চামড়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেখা হয়। তিনি এ বিষয়ে জানেন না।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রমাপদ দে বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদেরকে কীভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে হয়, সেগুলো ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছি। তাদেরকে এ বিষয়ে বিভিন্ন লিফলেট দিয়েছি।’
চামড়ার দাম কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো চামড়া যাতে বিনষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেছি। এ পর্যন্ত কেউ চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছেন এরকম কোনো খবর আমরা পাইনি।’
কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এসজে/এমএস