বাঁশির সুরে চানাচুর বেচে সংসার চলে সানির

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ২৭ আগস্ট ২০২১

গায়ে দামি গেঞ্জি। কিন্তু পরনে কয়েক রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি পায়জামা। পায়ে সাদা জুতা। বাম কাঁধে ঝুলছে ঝুঁড়ি। ডান হাতে বাঁশি আর পেছনে একটি ব্যাগ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন বেশভূষা সানির।

পুরো নাম সানি আহম্মেদ। বোয়ালমারী-মহম্মদপুর শেখ হাসিনা সেতুর উপর ঘটি গরম করে চানাচুর বিক্রি করেন তিনি। ক্রেতাদের নজর কাড়তে বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ দেন তিনি। বাঁশির সুরে-সুরে চানাচুর বিক্রি করেই চলে সংসার তার। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে ২০ বছর ধরে এ পেশায় জীবন যুদ্ধ করছেন তিনি।

বাঁশির সুর তুলতেই ক্রেতারা হাজির হন সানির দোকানের সামনে। বিভিন্ন ধরনের গানের সুর তুলে আনন্দ দেন তাদের। বাঁশির সুরের টানে কাছে এসে ১০-২০ টাকার চানাচুর ক্রয় করেন কেউ কেউ।

ঘুরতে আসা মুকুল কুমার বোস, মনিরুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম, খালিদ হাসান রনিসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সময় পেলে প্রায়ই বিকালে-সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা সেতুতে ঘুরতে আসি। সানি ভাইয়ের বাঁশির সুর আর চানাচুর ভাজা এখানে বেশ জমজমাট। সবাই এটাতে মুগ্ধ।

jagonews24

স্থানীয়রা জানান, বাঁশিতে বিভিন্ন গানের সুর শুনতে ভালো লাগে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত শত-শত মানুষের মিলন মেলা ঘটে এ সেতু এলাকায়। দুই উপজেলার মাঝখানে আলাদা একটা মিলন মেলার সৃষ্টি করেছে সেতুটি। শেখ হাসিনার নামে নামকরণ হওয়া সেতুটি এ এলাকার মিনি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

মো. সানি আহম্মদ এখন ঘটিগরম বা বাঁশিওয়ালা নামেই পরিচিত। বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। এক সময় ঢাকায় বেকারিতে কাজ করতেন সানি আহম্মদ। নদীতে ভিটেমাটি হারিয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি বাড়িতে এসে এ ব্যবসায় জড়িত হন।

সানি আহম্মেদ বলেন, অভাবের কারণে বেশি পড়ালেখা করতে পারি নাই। তিনবার নদী ভাঙনের মুখে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে এ পেশায় আছি। গত ২০ বছর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাই। মানুষ জীবনের গল্প শোনে। বাঁশির সুর শোনে কিন্তু দুঃখের কথা শুনে কেউ পাশে দাঁড়ায় না।

তিনি আরও বলেন, দিন শেষে চানাচুর ভাজা বিক্রি করে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা লাভ হয়। এ টাকা দিয়েই পাঁচ সদস্যের সংসারের ভরণপোষণ চলে। বড় মেয়ে ১০ দশম শ্রেণিতে পড়ে, মেঝ ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও দুই বছর বয়সের এক ছেলে আছে। ভাজা তৈরির কাজে স্ত্রী সহযোগিতা করেন।

এন কে বি নয়ন/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।