‘ব্রি হাইব্রিড-৬’ ধানে কপাল খুলছে কৃষকদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ভোলা
প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১

ভোলায় প্রথমবারের মত ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। ক্ষেতে রোগ, পোকা-পাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় কম খরচে অধিক সফল পাচ্ছেন তারা। ফলে অন্যান্য ধানের চেয়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবেন কৃষকরা।

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচ একর জমিতে প্রথমবারের মত ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করেন মো. ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা। প্রথমবারেই ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তার সফলতা দেখে ওই গ্রামের অর্ধ শতাধিক কৃষক আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন।

মো. ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছর আমন মৌসুমে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেন। তাকে বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) জমিতে ১০ মণ ধান উৎপাদন হতো কিন্তু এ বছর তিনি ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় ২৪ মণ ধান পেয়েছেন।

‘ব্রি হাইব্রিড-৬’ ধানে কপাল খুলছে কৃষকদের

এছাড়াও হেক্টর প্রতি ৭০-৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ধান পেয়েছেন ১৬৮ মণ। আর খরচ বাদে হেক্টর প্রতি তার ৬৫-৭০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। ক্ষেতে রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় সার-কীটনাশকও কম লাগে। এতে কম খরচ ও কম পরিশ্রমে অধিক ধান উৎপাদন হওয়ায় অন্যান্য ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন।

পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের বাঘার হাওলা গ্রামের কৃষক মো. মোছলে উদ্দিন জানান, ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করতে যেমন খরচ কম তেমনি পরিশ্রমও কম।

‘ব্রি হাইব্রিড-৬’ ধানে কপাল খুলছে কৃষকদের

একই এলাকার কৃষক মো. আবু কালাম জানান, গ্রামের কৃষকদের মুখে শুনেছেন ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করলে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এটি শুনে তিনি রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের মো. ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লার ক্ষেতে দেখতে এবং বিষয়টি বুঝতে এসেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবছর ভোলার সাত উপজেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিত থাকলেও আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ হয়েছে ৭০ হেক্টর, উচ্চ সফলশীল উফশী জাতের হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে।

‘ব্রি হাইব্রিড-৬’ ধানে কপাল খুলছে কৃষকদের

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এবছর প্রথমবারের মত ভোলা সদর ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক ৭০ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করেছেন। এদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ২০ হেক্টর ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৫০ হেক্টর চাষ হয়।

তিনি আরও জানান, কৃষকরা ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান হেক্টর প্রতি ফলন পাচ্ছেন ৭ দশমিক ১৫ টন ও উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধান হেক্টর প্রতি পাচ্ছেন ৬ টন। যার কারণে আগামীতে অনেক কৃষক ব্রি হাইব্রিড-৬ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে আগামীতে এ জাতের ধান চাষ করে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।