হাতির আক্রমণ থেকে বেঁচে ফেরা কৃষক নূর এখনো আঁতকে ওঠেন
‘আমন ক্ষেত দেখে যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ঠিক তখন চারটি হাতি আমাকে ঘিরে ধরলো। তখন ভেবেছিলাম আর বুঝি বাড়ি ফেরা হলো না। হঠাৎ একটি হাতির শুঁড়ের আঘাতে আমি জঙ্গলের একটি গর্তে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না।’
চোখে-মুখে আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে জাগো নিউজকে কথাগুলো বলছিলেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা নূর মিয়া (৪৫) নামে এক কৃষক। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মারাম গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৬ নভেম্বর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জঙ্গল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের বড়গোপ টিলা জঙ্গলে আসা চার হাতির আক্রমণে আহত হন কৃষক নূর মিয়া। পরে স্থানীয় কৃষক কাজল মিয়াসহ কয়েকজন মিলে তাকে উদ্ধার করেন। হাতির আঘাতে তার মুখের নিচে চারটি সেলাই পড়ে।
সেই ভয়ঙ্কর সময়ের কথা মনে হলে এখনো নূর মিয়া আঁতকে ওঠেন বলে জানান তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম।
তিনি বলেন, কালকে সারা রাত তিনি ঘুমাননি। একটু পর পর ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ওনার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
স্থানীয় কৃষক কাজল মিয়া বলেন, হাতি যখন নূর মিয়াকে ঘেরাও করে তখন আমিসহ কয়েকজন লুকিয়ে দেখছিলাম। সাহস করে হাতির দ্বারে যেতে পারিনি। ভেবেছিলাম আমরা হয়ত নূর মিয়াকে আর বাঁচতে পারবো না। কিন্তু একটি হাতি তাকে শুঁড় দিয়ে আঘাত করলে সে জঙ্গলের একটি গর্তে পড়ে যায়। সেখান থেকে হাতিগুলো চলে গেলে আমরা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যাই। স্থানীয় চিকিৎসক আলী নূরকে খবর দিলে তিনি চিকিৎসা করেন।
ডাক্তার আলী নূর বলেন, আমি খবর পেয়ে নূর মিয়ার বাড়ি চলে যাই। গিয়ে দেখি তার জ্ঞান নেই এবং পায়ে, হাতে ও মুখের নিচ দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাৎক্ষণিক তার রক্ত বন্ধ করে সেখানে চারটি সেলাই দেই।
সুনামগঞ্জ জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক অরুণ বরণ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, হাতি আসলে আমাদের কিছু করার নেই। ধারণা করা হচ্ছে হয় চারটি হাতি দলবেঁধে ঘুরতে এসেছিল, আবার তারা ভোরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, হাতিকে আঘাত করার সুযোগ নেই। কেউ যদি হাতিকে আঘাত করে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং হাতি যদি কারও ধান কিংবা কোনো ব্যাক্তিকে আঘাত করে তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
লিপসন আহমেদ/এসজে/জেআইএম