বাতি ছাড়াই আলোকিত আস-সালাম জামে মসজিদ, নেই জানালা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
লক্ষ্মীপুরের আস-সালাম জামে মসজিদ

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ব্যতিক্রমী মডেলে স্থাপন করা হয়েছে আস-সালাম জামে মসজিদ। মসজিদটির বিশেষত্ব হলো বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই প্রাকৃতিক আলোয় আলোকিত থাকে। এটি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায় অবস্থিত। রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের উদ্যোগে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। মসজিদ ঘিরে চালু করা হয়েছে শিক্ষা কমপ্লেক্স।

মসজিদটিতে বর্ষায় বৃষ্টির ছোঁয়া আর শীতে কুয়াশার ঠান্ডা পরশ দুটোই উপভোগ করতেন পারবেন মুসল্লিরা। তবে রোদের গরমে কেউ পুড়বে না আবার বৃষ্টিতেও কেউ ভিজবে না। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো মুগ্ধতা ছড়ায় মসজিদের ভেতরে। ব্যতিক্রমী মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন।

দ্বিতল এ মসজিদে কোনো জানালা নেই। এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যে চারদিক থেকে কোনো বাধা ছাড়াই আলো-বাতাস প্রবেশ করছে ভেতরে। তবে মুসল্লিদের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য দুটি দৃষ্টিনন্দন দরজা রয়েছে।

Mosque-(5).jpg

গরমে মসজিদ শীতল করার জন্য ভেতরে রয়েছে চারটি জলাধার। গ্রীষ্মকালে মসজিদ শীতল রাখবে জলাধারগুলোতে স্থান পাওয়া শীতল পাথর।

দ্বিতল এ মসজিদের নিচতলা দুভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পেছনে মাঝ বরারব গলিপথ। তার দুপাশে শীতল জলাধার, রোদ আর বৃষ্টির পবেশপথ। গ্যালারির অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলায় নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

মসজিদটির ছাদ প্রচলিত স্থাপনার মতো নয়। দেওয়াল বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রণে আরসিসি ঢালাই।

Mosque-(5).jpg

পুরো মসজিদে একসঙ্গে ৪০০ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি ঈদগাহ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে আস-সালাম মসজিদ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমীন ও তার দল মসজিদটির নকশা তৈরি করেন। ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদের নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষ দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর আগত শিশু ও মুসল্লিদের মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন খাবার বিতরণ করা হয়।

Mosque-(5).jpg

মসজিদ ঘিরেই আস-সালাম হাফেজিয়া মাদরাসা গড়ে তোলা হয়েছে। কোরআনে হাফেজ ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা কমপ্লেক্সের অধীনে একটি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।

২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি’ পাওয়ার জন্য মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে। এটি আধুনিককালে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা বলে দাবি স্থপতি ও দর্শনার্থীদের।

Mosque-(5).jpg

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি তার বাবা-মায়ের নামেই ট্রাস্টটি গঠন করেন। এর মাধ্যমে তিনি জনহিতকর কাজ পরিচালিত করে আসছেন।

আস-সালাম জামে মসজিদ ও শিক্ষা কমপ্লেক্সের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন আশরাফুল আলম হান্নান। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন নিয়ে’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

Mosque-(5).jpg

তিনি বলেন, চরপোড়াগাছা ইউনিয়নটি শিক্ষাসহ অবকাঠামোগত দিক থেকে অবহেলিত অঞ্চল। এখানে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন আস-সালাম জামে মসজিদ এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। আরবি ও ইংরেজি শিক্ষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করে এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন আশরাফুল আলম।

কাজল কায়েস/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।