শারীরিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় ৫ দিনে ৩ জনকে হত্যা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গ্রেফতার ইয়াদ মোল্লা

ঝিনাইদহে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়ায় পাঁচদিনের ব্যবধানে তিনজনকে হত্যা করেছেন ইয়াদ মোল্লা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

গ্রেফতার ইয়াদ মোল্লা নড়াইল জেলার বিল ডুমুরতলা গ্রামের মৃত চান মোল্লার ছেলে।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এসময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দেন ইয়াদ মোল্লা।

পুলিশ জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন ইয়াদ মোল্লা। রাতে এসব এলাকার স্কুল ও নির্জন জায়গা বেছে নিতেন ঘুমানোর জন্য। প্রায় ১৫ দিন ধরে জেলা সদরের লাউদিয়া এলাকায় রাত্রিযাপন করছিলেন ইয়াদ মোল্লা। এরই এক পর্যায়ে লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন শুরু করেন সালাউদ্দিন নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি।

এসময় সালাউদ্দিনকে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন ইয়াদ মোল্লা। তবে অনেক চেষ্টা করেও তাকে সমকামিতায় রাজি করাতে পারেননি। এক রাতে ঘুমানোর এক পর্যায়ে দেখেন তার কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন সালাউদ্দিন। তাকে এ অবস্থায় দেখে পার্শ্ববর্তী মাঠে থাকা একটি মেহগনি ডাল নিয়ে এসে ঘুমন্ত সালাউদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করেন ইয়াদ মোল্লা। পরে মরদেহ স্কুলের সিঁড়ির নিচে রেখে তেঁতুলতলা এলাকায় থাকা শুরু করেন।

পুলিশ আরও জানায়, সেখানেও সমকামিতা ও রাতে স্কুলের বারান্দায় থাকতে বাধা দেওয়া নিয়ে বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইলিয়াস পাটোয়ারী নামের একজনকে নলকূপের হাতল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন ইয়াদ মোল্লা। এবারও তিনি স্থান পরিবর্তন করে সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নে থাকা শুরু করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় বিবি জান নামের এক নারীকে পিটিয়ে আহত করেন। তিনি ছাগলের জন্য গাছের পাতা কাটতে বের হয়েছিলেন।

শারীরিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় ৫ দিনে ৩ জনকে হত্যাঝিনাইদহের তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন গ্রেফতার ইয়াদ মোল্লা

ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে ইয়াদ মোল্লাকে আটক করে র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের টহল দল। সেসময় বিবস্ত্র ও মুখ বাধা অবস্থায় গুরুতর আহত বিবি জানকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওইদিন রাতেই ইয়াদ মোল্লার বিরুদ্ধে সদর থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে র‌্যাব।

ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি তেঁতুলতলা এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯ ফেব্রুয়ারি লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি পোড়াহাটি এলাকায় পরপর তিনজনকে হত্যা করেন ইয়াদ মোল্লা। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন-চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার নুরপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিক পাটোয়ারি ছেলে ইলিয়াস পাটোয়ারী, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে সালাউদ্দিন এবং ঝিনাইদহের পোড়াহাটি গ্রামের আনা মিয়ার স্ত্রী বিবি জান।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।