অকথ্য ভাষায় গালাগালি-হত্যার হুমকি, আ’লীগ নেতার ফোনালাপ ভাইরাল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ১১ মার্চ ২০২২
সাবেক কাউন্সিলর সোহেল রানা (বামে) ও সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সোহেল রানার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। ফোনালাপে সোহেল রানাকে হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা গেছে মিজানুর রহমানকে।

কথোপকথনের অডিওটি শুক্রবার (১১ মার্চ) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অডিও ক্লিপটি জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

তবে অডিও ক্লিপটি তিনমাস আগের বলে জানান সাবেক কাউন্সিলর সোহেল রানা। তার দাবি, শনিবার (১২ মার্চ) পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে একটি মহল কল রেকর্ডটি ফাঁস করেছে।

মিজানুর রহমান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ। সোহেল রানা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি

২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটি নিচে তুলে ধরা হলো-

মিজানুর রহমান: হ্যালো
সোহেল রানা: আসসালামু আলাইকুম স্যার।
মিজানুর রহমান: তুমি সোহেল কাউন্সিলর না?
সোহেল রানা: জ্বি, স্যার। আমি তো বাইরে তাই দেখতে পারি নাই স্যার।
মিজানুর রহমান: তুমি কি ইয়ে টিয়ে যাও নাকি, রেজিস্ট্রি অফিসে যাও নাকি?
সোহেল রানা: জ্বি, জ্বি স্যার, জ্বি!
মিজানুর রহমান: তুমি আর রেজিস্ট্রি ঢুকবা না
সোহেল রানা: মিজান স্যার...স্যার
মিজানুর রহমান: তুমি আর রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকবা না আমি বলে দিলাম। ঢুকলে নিজ দায়িত্বে ঢুকবা। (রাগান্বিত হয়ে) রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকলে নিজ দায়িত্বে ঢুকবা। তোর কোনো বাপ ফিরাইতে পারবে না। আমি ১২টার দিকে আসবো। তোর চাপার দাঁত যে কয়টা আছে সে কয়টা দাঁড়াই থাইকা তুলমু।
সোহেল রানা: আমি কী করছি স্যার?
মিজানুর রহমান: (এবার অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে) তুই লিখছিলি না? তুই লিখছিলি না (গালি) বাচ্চা আমরা টাকা খাইয়া করছি। আমার কাছে তোর ভিডিও আছে, সব আছে।
সোহেল রানা: কোনোদিনই করি নাই স্যার। এগুলো—না না স্যার। এগুলো সব মিথ্যা কথা স্যার।
মিজানুর রহমান: (প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে) তোরে মাইরা ফালামু, তোরে আমি মাইরা ফালামু। তোর কোন বাপ আছে বলিস যে মিজান প্রফেসর ফোন দিছিলো। কোন বাপ আছে ফিরাইতে বলিস। তোর কোন মুরাদ বাপ আছে না কোন বাপ আছে (গালি) বাচ্চা ফিরাইস। আমি তোরে বইলা দিলাম যে আমি ১২টার সময় যামু রেজিস্ট্রি অফিসে। আমি ১২টায় যামু—আমি সময় দিয়া দিলাম, তুই থাকিস।
সোহেল রানা: ঠিক আছে। আপনি নেতা, আপনার কথায় আমি ইলেকশন থেকে সরে দাঁড়াইছিলাম স্যার।
মিজানুর রহমান: (এবার আরও উত্তেজিত হয়ে) তোর হাড্ডি-মাংস আমি এক কইরা ফালামু। তুই, নিয়ামত, লেবু—থাকিস। আমি আসতেছি ১২টায় (গালি) বাচ্চা। তোর বাপের উপর ভর কইরা, তোর মুকুল বাপ, মুরাদ বাপের উপর ভর কইরা (এরপর অকথ্য ভাষায় গালি) তুই যে মেসেজ দিছস, সব রেকর্ড আমার কাছে (গালি) বাচ্চা। তোর বিরুদ্ধে আর্মসের মামলা দিমু আমি। পুলিশ দিয়া তোরে ধরামু। আর আজকে ১২টায় আমি যামু (গালি) বাচ্চা, তুই থাকিস।
সোহেল রানা: আপনি ইলেকশনে বসাই দিছিলেন স্যার। আমি কি বসি নাই স্যার?
মিজানুর রহমান: কইলাম তো তোরে আমি দাঁড়ানোর উপর তোর গালে চড়ামু। (গালি) বাচ্চা থাকিস। তুই তো আমারে চিনস তাই না! পরে বলতে শোনা যায় ১২টার পরে তোরে যদি রেজিস্ট্রি অফিসের আশেপাশে দেখি...

এ বিষয়ে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘কল রেকর্ডটি প্রায় তিনমাস আগের। সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ামত আলী, আবু হাসান তরফদার লেবু, জাহাঙ্গীর আলম শাহীন গংদের সঙ্গে না থাকার জন্য আমাকে কল দিয়ে তিনি (মিজানুর রহমান) সাবধান করেছিলেন। ওইসময় যারা আমার সঙ্গে ছিলেন তারাই রেকর্ডটি শোনার ছলে হয়তো রেখে দিয়েছিলেন। শনিবারের পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ওই পক্ষটি রেকর্ডটি ফাঁস করেছে।’

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। বর্তমানে তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অডিওটি প্রায় পাঁচ থেকে ছয়মাস আগের। কালকে (শনিবার) আমাদের পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনকে নষ্ট করার জন্য একটি চক্র অডিওটি কাটছাঁট করে ভাইরাল করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রার অফিসে একটি চক্র চাঁদাবাজি করে আসছে। মূলত এ বিষয়টি সাবধান করার জন্য সোহেল রানাকে ফোন করেছিলাম। তবে আমাদের মধ্যে তো কোনো ঝামেলা নেই। চাইলে সোহেল রানাকে ফোন করে জানতে পারেন।’

তবে তার মতো মানুষের এভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন পৌর আওয়ামী লীগের এ নেতা।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হলেই তিন চারজন মিলে চাঁদাবাজি করতো। এতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এ চাঁদাবাজদের কয়েকজনের মধ্যে একজন ওই সোহেল। তবে রাজনৈতিক দায়িত্বের জায়গা থেকে সবার শব্দ চয়নে আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ করার কারণেই মূলত এ কথাগুলো আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা পার্টি অফিসে বসেছি।’

মো. নাসিম উদ্দিন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।