নড়বড়ে সাঁকোটিই দুই জেলার ৫০ হাজার মানুষের ভরসা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২২
হেলে পড়েছে সাঁকোটি, ভেঙে গেছে কংক্রিটের পিলার

নড়াইল সদর উপজেলা ও যশোর সদর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে ১০ বছর আগের নির্মাণ করা হয় বাসের সাঁকো। কিন্তু সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় কয়েকবছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন দুই জেলার প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা।

বিশেষ করে ভোগান্তি পোহাতে হয়  স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রোগী ও বয়স্কদের। তাই ভৈরব নদের ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের শেখহাটী বাজারের কাছে আফরা এলাকায় ভৈরব নদে কংক্রিটের পিলারের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোর দুই পাশে রেলিং নেই। কংক্রিটের দুটি পিলার ভেঙে গেছে। বাকি পিলারগুলো হেলে পড়েছে। কাঠ এবং বাঁশের পাটাতনের বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গেছে। সাঁকো উঁচু-নিচু অবস্থায় আছে। লোকজন উঠলেই সেটি দুলতে থাকে। সাঁকোর ওপর দিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ লোকজন আতঙ্কে চলাচল করছেন।

আফরা গ্রামের বাসিন্দা সাধন বিশ্বাস বলেন, ‘নদীর পশ্চিমপাড়ের যশোর অংশে প্রায় ৮-১০ গ্রামের অসংখ্য কৃষকের কৃষি জমি রয়েছে পূর্বপাড়ের নড়াইল অংশে। যে কারণে সেতুর ওপর দিয়ে উভয়পাড়ের কৃষকরা বিভিন্ন কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করেন। এছাড়া স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েসহ অসংখ্য মানুষ আসা-যাওয়া করেন এই সাঁকো দিয়ে।’

Na1

আফরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির ইসলাম ও সুমনা জানায়, ‘আমাদের ঝুঁকি নিয়ে নদীর এপার-ওপারে যেতে হয়। আগে স্কুলে যেতে দুটি খেয়া নৌকা পার হতে হতো। এখন নৌকা পারের ঝামেলা না থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে হচ্ছে। সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে পানিতে পড়ে যায়।’

স্থানীয় জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ও বিকেবি নড়াইল শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহাদ আলী খান বলেন, ‘আমি খুব কম সময়ে সাঁকো পার হয়ে অফিসে যাই। কিন্তু সাঁকো নড়বড়ে হওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে ভয়ে পার হতে হয়।’

শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ওরফে মাসুম গাজী বলেন, এলাকাবাসীর কষ্টের কথা ভেবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অনেক দেনদরবার করেও একটি সেতু নির্মাণে ব্যর্থ হই। অবশেষে ২০১২ সালে নিজের প্রায় দেড় লাখ টাকায় ও স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে ইউনিয়নের আফরা এলাকায় বুড়ি ভৈরব নদের ওপর কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০ ফুট প্রশস্ত একটি সাঁকো নির্মাণ করি। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। এরপর কোনোরকম জোড়াতালি দেওয়া হয়।

সেলিম রেজা আরও বলেন, মাঝে মধ্যে এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হলেও বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থা জরাজীর্ণ। সেতুর অনেক জায়গায় বাঁশ-কাঠ পচে নষ্ট হয়ে ভেঙে গেছে। সাঁকোটি হেলে পড়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

শেখহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলক বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, মাঝে সাঁকো ভেঙে গেলে আমরা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে মেরামত করে কোনোরকম চলাচলের ব্যবস্থা করি। দুই জেলার সীমান্তবর্তী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এর আগে নড়াইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে নড়াইল সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. জহীর মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাঁকোটি নড়াইল ও যশোরের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে। ভৈরব নদের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

হাফিজুল নিলু/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।