দিনে একটা রুটি দিতো, পানি চাইলেও মারতো: লিবিয়াফেরত রাকিবুল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৯:১২ এএম, ২০ মার্চ ২০২২
লিবিয়াফেরত মো. রাকিবুল শেখ

 

সরকারের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ৬ মাস পর লিবিয়ার খামচাখামচি কারাগার থেকে বাড়ি ফিরেছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ভ্যানচালক কালাম শেখের ছেলে মো. রাকিবুল শেখ (২৫)। ছেলেকে ফিরে পেয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে রাকিবুলের পরিবার। এলাকাবাসীর দাবি দালালদের আইনের আওতায় এনে যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।

শনিবার ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, নিজস্ব কোনো সম্পত্তি না থাকায় অন্যের জায়গায় বসবাস করেন রাকিবুলরা। সংসারের মেজো ছেলে তিনি। বাবা, মা, দাদি, বড় বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে তার পরিবার। সংসারের হাল ধরতে ‘জনপ্রিয় বাগদাদ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি’তে কাজ করতেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় রাকিবুলকে ধারদেনা করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাঠান পরিবারের লোকজন।

তাকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেন রাজৈর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের রহম বেপারীর ছেলে মেরাজ বেপারী ও তার বড় ভাই মাসুদ বেপারী। এরপর লিবিয়ায় নিয়ে মারধর করে ও বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে রাজৈর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের মাধ্যমে আরো ৩ লাখ টাকা নেন তারা। এর কিছুদিন পরই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ইউনিয়নের মো. ছাপতি সাহার ছেলে মো. তোতা সাহা নামে আরেক দালাল ফোন করে ৬ লাখ টাকা চান। সেই টাকাও মিজানুর রহমান কাউন্সিলরের কাছে দিতে বলেন।

পরে টাকা পরিশোধ শেষে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি পাঠানোর সময় লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে আটক হন রাকিবুল। এ সময় আটক সকলকে খামচাখামচি কারাগারে বন্দি করা হয়।

রাকিবুলের বাবা কালাম জানান, সাংবাদিকরা বিভিন্ন দপ্তরে ফোন দেওয়ার পর দালালরা কিছু টাকা ফেরত দিয়েছে।

রাকিবুল শেখ বলেন, ‘দালালরা আমাকে নির্যাতন করে অনেক টাকা নেছে। ধরা পড়ার পর দালালরা কোনো খোঁজ নেয় নাই। একটা কসাইখানার মধ্যে আমাদেরকে রেখেছিলো পুলিশ। সেখানে সাড়ে ৪ মাস ছিলাম। সারাদিনে একটা খবজা (পেচানো রুটি) খেতে দিতো। পানি চাইলে মারধর করতো। লিবিয়ায় মোট এক বছর ছিলাম। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি দালালদের বিচার চাই।’

এছাড়াও রাজৈর উপজেলার রাজৈর পৌরসভার মজুমদারকান্দি গ্রামের হবি মোল্লার ছেলে ও উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের পিরেরবাসা এলাকার বাসিন্দা মহিদুল একইসঙ্গে দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। একইভাবে ভোগান্তির শিকার হন মহিদুলও। তবে এ ব্যাপারে মহিদুল বা তার পরিবারের কেইউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে টাকা গ্রহণকারী রাজৈর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কিছুদিন আগে আমার এলাকার পরিচিত কিছু লোক দালাল নামধারী মেরাজ বেপারীসহ কয়েকজনকে আটক করে। এ সময় দালাল পক্ষের লোকজন আমার সহায়তা চান। বিদেশে নেওয়ার কথা বলে না নিতে পারায় আমি তাদের বকাবকি করি। আটকে পড়া যুবকদের ছেড়ে দিতে দালালদের ও তার পক্ষের লোকদের চাপ দিই। তখন তারা (দালাল পক্ষের লোকজন) আমার কাছে টাকা জমা রাখলে বিদেশে আটকে পড়া আমার প্রতিবেশী যুবকদের ছেড়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে। এছাড়া ঝিনাইদাহসহ অন্য জেলার দালালদের আমি নিজেও চিনি না। কিন্তু বিদেশে আটকে পড়া যুবকদের পক্ষ থেকে আমার কাছে টাকা রেখে যান তারা। আমার কাছে টাকা রাখার ব্যাপারে এলাকার লোকদের কোনো আপত্তি ছিল না। আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি, সেই কারণে তারাই আমাকে টাকা রাখার ব্যাপারে জড়িয়েছে। আমি শুধু এলাকার মানুষের উপকার করার জন্য তাদের রেখে যাওয়া টাকা গচ্ছিত রেখেছি। এর বেশি কিছু নয়। মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি এখন দোষী হয়েছি।

এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

নাসিরুল হক/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।