তাহেরীর মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২২
সিলেটে ১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন আলোচিত ইসলামিক বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী

সিলেটে ১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আলোচিত ইসলামিক বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সিলেট বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক মো. আবুল কাশেম তাহেরীর উপস্থিতিতে আদেশ দেন। এরআগে গত ২৪ মার্চ সিলেটের আদালতে হাজির হয়ে মামলার আবেদন করেছিলেন তাহেরী। আজ ৩১ মার্চ এ ব্যাপারে আদেশের তারিখ ধার্য ছিল।

সিলেটের বালাগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলে আসার জন্য অগ্রিম টাকা নিয়েও আসেননি—এমন অভিযোগে ১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এটিএম ফয়েজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক মামলাটি পিবিআই সিলেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এ মামলায় আসামিরা হলেন-সিলেটের বালাগঞ্জ পৈলনপুরের মইনুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, পৈলনপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব জয়নাল আবেদীন, সিলেট অনলাইন টিভি নবীগঞ্জের রাজু আহমদ, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জ সদরঘাটের শেখ শাহজাহান, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী হবিগঞ্জ লাখাই মুড়াকুড়ির আব্দুল কুদ্দুছ নুরী, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী তপু তরফদার, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজাম আহমেদ আকরাম, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজামউদ্দিন সিদ্দীকি।

একে মিডিয়া সিলেট, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জের দেওপাড়া সাতাইল গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে কামরুল ইসলাম জালালি, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া তুলাইশিমুল গ্রামের শেখ রাসেল, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারগাছ গ্রামের আবদুল ফরহার ছেলে মোরশেদ শাহ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার গুমগুমিয়া গ্রামের খালেদ আহমদের ছেলে এস এ শামিম ও টিটিভি। এ মামলায় চারজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গিয়াস উদ্দিন তাহেরী বাংলাদেশের নাগরিক এবং আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে উল্লেখিত আসামিরা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিভিন্ন ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটে প্রচার করায় দেশসহ বিশ্বব্যাপী তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে। যে কারণে সমাজে চলাফেরা ও মুখ দেখানো তার জন্য লজ্জাকর হয়ে পড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, মইনুল ইসলামের সহযোগিতায় মুজিবুর রহমান, জয়নাল আবেদীন মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সুন্নি সম্মেলনে তাহেরীকে দাওয়াত না করে, মানসম্মান ও খ্যাতি নষ্টের জন্য অনুমতি ছাড়া পোস্টার প্রকাশ করেন। পরে জুতা মিছিল করে ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল করা হয়। তখন হাফেজ মুজিবুর রহমান মানুষের সামনে তাহেরীকে জুতাপেটার কথা বলে আলেম সমাজের খ্যাতি নষ্ট করার কথা বলেন।

মুফতি তাহেরীকে ইসলামি সম্মেলনে উপস্থিত করানোর কথা বলে গ্রামবাসীকে বিশ্বাস করানোর জন্য পৈলনপুর মসজিদের ইমাম ও নুরী মিলে দুটি বিকাশ নম্বরে ৩০ হাজার ৬০০ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বিকাশ করেন বলেও মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘জুতা মিছিল তাহেরির বিরুদ্ধে’, ‘৩৩ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে বালাগঞ্জে এক মাহফিলে মুর্খ বাউল বক্তা’, ‘তাহেরি না আসায় সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা’সহ নানা ধরনের শিরোনাম দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এতে তাহেরী ও তার পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে। যা কোনো অর্থমূল্য দিয়ে মূল্যায়ন করা অসম্ভব।

মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকা নিয়ে সিলেটের বালাগঞ্জে একটি ওয়াজ মাহফিলে আসেননি—এমন অভিযোগ ওঠে মঙ্গলবার (২২ মার্চ)। এদিন বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে এ মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয়রা।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গিয়াস উদ্দিন তাহেরীকে। বিকেলের দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে তার ওয়াজ করার কথা ছিল। মাহফিলে আসা বাবদ তার পিএসের কাছে দুই ধাপে অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন তারা।

‘কিন্তু ২২ মার্চ সকাল থেকেই তাহেরির পিএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলে কেউ রিসিভ করেননি। ওয়াজের নির্ধারিত সময় পর্যন্তও কেউ কল রিসিভ করেননি। এমনকি কল ব্যাকও করেননি।’

এক পর্যায়ে টাকা নিয়ে তাহেরীর না আসার অভিযোগটি আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মাহফিলের মাইকে জানিয়ে ওয়াজ শুনতে আসা মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এসময় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা তাহেরীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এসময় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে তাহেরীকে পুরো সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তী সময়ে বিষয়টি তাহেরীর নজরে এলে তিনি অভিযোগের বিষয়টি সস্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন। ওইদিনই তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।

ছামির মাহমুদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।