গরুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মাগুরা শহরের মানুষ
মাগুরা শহরে যত্রতত্র অবাধে বিচরণ করছে গরু। দিনেরাতে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই শতাধিক গরু শহরের ব্যস্ততম সড়কসহ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী।
গরুর অত্যাচারে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন অনেক ফল ব্যবসায়ী। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এ বিষয়ে অনেকবার পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
শহরের রাস্তায় অবাধে চলাফেরা করে গরু
শহরের হকার, ফুটপাত ও রাস্তার পাশের ফল এবং ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে প্রায়ই ক্ষুধার্থ গরু দোকানে ঝোলানো খাদ্যদ্রব্য ও ফল খেতে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করে। হেঁটে চলাচল করা বয়স্ক ও বিদ্যালয়গামী কোমলমতি শিশুসহ সব বয়সের মানুষ প্রায়ই গরুর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। যত্রতত্র পড়ে থাকা গরুর গোবরে চলন্ত মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও হেঁটে চলা মানুষ পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
শহরের কলেজ সড়কে গরুর অত্যাচারে পেশা বদল করেছেন ফল ব্যবসায়ী শরিফুল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একমাত্র গরুর অত্যাচারে ফল ব্যবসা বাদ দিয়েছি। গত তিন বছরে গরুতে আমার দুই লক্ষাধিক টাকার ফল নষ্ট করেছে। তাই আমি ফল ব্যবসা বাদ দিয়েছি।’
রাস্তায় পড়ে যাওয়া চাল খাচ্ছে দুটি গরু
একই সড়কের ফল ব্যবসায়ী সুমন বলেন, ‘রাতে দোকানে বন্ধ করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে বেঁধে রেখে যাই। সকালে এসে দেখি গরু শিং দিয়ে গুঁতিয়ে ত্রিপল ছিঁড়ে ফল খেয়েছে আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। থানা থেকে একবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু এটা বন্ধ হচ্ছে না।’
গরুর আক্রমণে একবার আহত হন বৃদ্ধ আব্দুর রউফ মাখন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি শহরের সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে সন্ধ্যায় হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে শিং দিয়ে গরু গুঁতা দেয়। পড়ে গিয়ে আমার ডান হাত ভেঙে যায়। আমার মতো অনেকেই এভাবে আহত হয়েছেন।’
শহরে অবাধে চলাফেরা করছে গরু
শহরের ইজিবাইক চালক আরিফ হোসেন জানান, শহরের মধ্যে প্রচুর গরু চলাচল করে। গরুর শিংয়ের গুঁতায় প্রায়ই ইজিবাইকের গ্লাস ভেঙে যায়। অনেকে গোবরে পিছলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
জানতে চাইলে মাগুরা পৌরসভার মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন, ‘গরুর মালিকরা এর (গরু) ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন। আমরা অনেকবার গরু ধরে এনেছি। তারা হাতে-পায়ে ধরায় আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। জরিমানাও করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও পৌরবাসীকে এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে আমরা চেষ্টা করছি।’
শিংয়ের গুঁতায় বাজারের ব্যাগ থেকে পড়ে যাওয়া খাদ্যপণ্য ওঠাচ্ছেন দুজন
পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল ইসলাম বলেন, এটা পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। একটা সময় আমরাও চেষ্টা করেছি। তবে যেকোনো আইনি সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা এগিয়ে আসবো।
মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, শহরে গরুর বিচরণ অনেক বেড়েছে। আমার গাড়ির সামনে প্রায়ই গরু এসে দাঁড়ায়। এটা নিয়ে আমরা অনেকবার অভিযান চালিয়েছে। কিছুটা কমেও ছিল। আমি মেয়রের কাছে গরুর মালিকদের নাম-ঠিকানা চেয়েছি। পুনরায় অভিযান চালানো হবে।
এসআর/জিকেএস