৩৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি শুকনাঝিরি পাড়ায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ০৬:১২ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০২২
৩৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর উপজেলার শুকনাঝিরি পাড়ায়

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সদর উপজেলার ৩ নম্বর ওয়ার্ড শুকনাঝিরি পাড়া। ৩৩ বছর আগে ১৭ তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার নিয়ে বসতি শুরু হয় এ পাড়ায়। সদর থেকে পাড়াটির দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। তবে তিন দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ পাড়ায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুকনা মৌসুমে পাহাড়ের উঁচু-নিচু মেঠোপথ ও ঝিরি বেয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। তবে বর্ষাকালে যাতায়াব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। পার্শ্ববর্তী কোনো স্কুল না থাকায় ঝিরিপথে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় পাড়ার শিশুদের। বর্ষা মৌসুমে মাটির পাহাড়ি রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত ও ঝিরিতে পাহাড়ি ঢলের কারণে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। পাড়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পায় না। এজন্য গুটিকয়েক মোবাইল ফোন থাকলেও সেগুলো সাপ্তাহিক রোয়াংছড়ি বাজারে দিন ছাড়া ব্যবহার করা যায় না।

jagonews24

শুধু কলাচাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার বাসিন্দারা। সবাই নিম্নআয়ের হওয়ায় গ্রামের বাইরে রেখে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানো প্রায় অসম্ভব। তাই প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারলেই গৃহশিক্ষকের কাছে বা অনাথালয়ে ফের শুরু হয় পড়াশোনা। এভাবেই লেখাপড়া করে কয়েকজন স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

পাড়ার ষাটোর্ধ্ব ললিত মোহন তঞ্চঙ্গ্যা জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩৩ বছর আগে ১৭ তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার নিয়ে শুকনাঝিড়ি পাড়ায় বসবাস শুরু হয়। বর্তমানে ৩৪ পরিবার নিয়ে দুশোরও বেশি জনগণের বসবাস এ পাড়ায়। দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছালেও এ পাড়ায় উন্নয়নের ন্যূনতম ছোঁয়া লাগেনি। চলাচলের জন্য ভালো সড়ক নেই, বিদ্যুৎ নেই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এ যেন আদিম যুগে বসবাস।’

পাড়ার যুবক উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাড়ায় একটি সড়ক ও টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের শতবার বলা হয়েছে। তারপরও কোনো কাজ হয়নি। প্রতিবার নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরে আর কাজ করেন না। মন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো ফল পাইনি।’

শুকনাঝিরি পাড়ার প্রধান নীল বরণ তঞ্চঙ্গ্যা। তার বাবা পাড়াপ্রধান ছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে। তিনিও বর্তমান পাড়াপ্রধান। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন সড়কের অভাবে পাড়াবাসীর যাতায়াতে দুর্ভোগ।

jagonews24

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরাজীর্ণ মাচাং ঘরে বসবাস করেন তারা। কলাচাষ করে যা আয় হয় তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। এত মানবেতর জীবনযাপন করলেও তারা সরকারি সহায়তা পান না।

নীল বরণ তঞ্চঙ্গ্যা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার জনগণের জন্য অনুদান দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই পাননি এই পাড়ায় বসবাসকারীরা। সর্বশেষ সরকারিভাবে কম দামে পণ্য পেতে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হলেও পুরো পাড়ায় মাত্র ৯ জন পেয়েছে এই কার্ড।’

এ বিষয়ে রোয়াংছড়ির সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং বলেন, জনগণ এই প্রথম আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তবে ওয়ার্ড মেম্বাররা শুকনাঝিরি পাড়াবাসীর কষ্টের কথা আমাকে জানাননি। সুযোগ পেলে তাদের জন্য যতটুকু করা সম্ভব করবো।

নয়ন চক্রবর্তী/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।