ছয়লেনের কাজে কাটা পড়তে যাচ্ছে সারিবদ্ধ শতবর্ষী গাছ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২২
সড়কের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী গাছ

ঝিনাইদহ থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত ৪৮.৫ কিলোমিটার রাস্তা ছয়লেন করার কাজ শুরু হয়েছে। সড়কের প্রতি কিলোমিটার রাস্তার সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এখন চলছে সড়কের দু’পাশের জমি অধিগ্রহণ ও গাছ কাটার কাজ।

এরই মধ্যে রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেপে লাল চিহ্নিত করে গেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সদস্যরা। সড়কটির কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আধুনিকতা ছোঁয়া লাগবে নাগরিক জীবনে। তবে নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সংস্কৃতির স্মৃতিচিহ্ন শতবর্ষীয়ান রেইন্ট্রিগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়াইলে বসবাসরত জমিদার কালীবাবুর মা কয়েকশ বছর আগে ভারতের কাশিপুর তীর্থ যাত্রা করেন। পথে অতিরিক্ত রোদের তাপ থাকায় সে সময় তার মায়ের আদেশে জমিদার ভারতের পাইকপাড়া থেকে নড়াইল, যশোর থেকে ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়কে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় রেইনট্রি রোপণ করা হয়। এখনো এ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্তমানে গাছগুলো দেখভাল করছে জেলা পরিষদ। গাছ কাটার বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সচিব মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ছয়লেন রাস্তা বাস্তবায়নকারী প্রকল্প দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল গাছগুলো অপসারণের জন্য। এরই মধ্যে আমরা নিময় অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে নিয়ম মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হবে। তবে যেখানে এসব গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না, সেখানে থাকবে।

ছয়লেনের কাজে কাটা পড়তে যাচ্ছে সারিবদ্ধ শতবর্ষী গাছ

এ সড়কের সবথেকে বেশি গাছ রয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা ও এর আশপাশে। এসব গাছের জন্য রাস্তা ও রাস্তার পাশের এলাকা সব সময় সুশীতল পরিবেশ বিরাজ করে। অন্যদিকে পাখিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের নিরাপদ আবাসস্থলও গাছগুলো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শত শত বছর ধরে এসব গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা ছয়লেনে কল্যাণে কাটা পড়তে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহের পরিবেশবীদ মাসুদ আহমেদ সনজু জাগো নিউজকে বলেন, গাছগুলো বাঁচানো কোনো পথ আমাদের নেই। আমরা শুধু জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করি। গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে ছয়লেনের রাস্তার কাজ করা সম্ভব। উন্নত দেশে এসব গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে রাস্তার কাজ করে। কিন্তু আমাদের দেশের ভিন্নচিত্র দেখা যায়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজ স্বার্থে কম মূল্যে বিক্রি করে টাকা আয়ের পায়তারা করে। যে কারণে অনেক সময় অকারণে গাছগুলো মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেন।

জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন জাগো নিউজকে বলেন, আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতে কিছু এলাকায় এ ধরনের রেইনট্রি গাছ দেখা যায়। এছাড়া দেশের আর কোথায় এরকম বর্ষীয়ান গাছ দেখা যায় না। যে কারণে ভারতে পাইকপাড়া থেকে বাংলাদেশের কালীগঞ্জ এবং নড়াইল পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক রেইনট্রি গাছগুলো দুদেশের সংস্কৃতি বন্ধন হিসেবে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।