পিরোজপুর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী
প্রচণ্ড গরমে সারাদেশের মতো পিরোজপুরেও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝেতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া এবং অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগও রয়েছে রোগী ও স্বজনদের।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ২টা পর্যন্ত পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৪ বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৪৭ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে জেলায় মোট ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৯৩ জন।
জেলায় গত এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছের ১ হাজার ৫৩৪ জন। এদের মধ্যে উপজেলার ৩৮৫ জন, নাজিরপুরের ১৫৩ জন, নেছারাবাদের ৩৮৬ জন, কাউখালির ৪২ জন, ভান্ডারিয়ার ৪৪৩ জন, মঠবাড়িয়ার ১২৫ জন।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু ইব্রাহীমের (১১ মাস) মা সালমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিছুক্ষণ পর পর রোগী আসছে। কিন্তু সিট খালি নেই। এখানকার পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। পরিষ্কার করতে আসে না কেউ। নিজেদেরটা নিজেরাই যতটুকু পারা যায় পরিষ্কার করছি।’
সদর উপজেলার শেকেরহাট গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদনীর (৬ মাস) বাবা সজল হাওলাদার বলেন, ‘আমার মেয়ে তিনদিন ধরে অসুস্থ ছিল। সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সিট পাই নাই, ফ্লোরে থাকতে হবে। চিকিৎসকরা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন।’
রোগীদের সঙ্গে সেবিকারা দুর্ব্যবহার করছেন অভিযোগ করে আরেক স্বজন আফসার আলী বলেন, ‘পরামর্শ চাইতে গেলেও রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্যান ঘোরে না, মশারি নেই। এসব নিয়ে কোনো কথাই বলা যায় না। সিরিঞ্জ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের নার্স মিরা বড়াল জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ২৪টি। সেখানে রোগী ভর্তি আছে ৪৭ জন। ওয়ার্ডে সেবিকা মাত্র তিন জন। ফলে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী যেভাবে সেবা দেওয়া দরকার তা আমরা দিতে পারছি না। শিশু, পুরুষ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরিষ্কারের জন্য মাত্র একজন সুইপার আছে। ফলে ওয়ার্ড পরিষ্কার করতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জাকী জাগো নিউজকে বলেন, গরমের প্রভাব ও দূষিত পানির কারণেই এ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ডায়রিয়া মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে পিরোজপুরে মোট ৬৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ডায়রিয়া আক্রান্তদের জন্য আইভি স্যালাইন মজুত আছে ১ হাজার সিসির ১৩ হাজার ৪১৮টি এবং ৫০০ সিসির ৫ হাজার ৩৩১টি। ব্যবস্থা আছে অন্যান্য চিকিৎসারও।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পানিশূন্যতা বেশি হলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
এসজে/জিকেএস