১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস, পোলাও চাল ফ্রি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:১০ পিএম, ০৩ মে ২০২২

টেবিলে সাজানো গরুর মাংস, পোলাও চাল ও মাংসের মসলা। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে এক কেজি করে গরুর মাংস, পোলাও চাল ও এক প্যাকেট মাংসের মসলা কিনছে নিম্নআয়ের মানুষ।

ঈদের দিন এমনি এক বাজারের দেখা মেলে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায়। ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরিবের কসাইখানা’ নামের ব্যতিক্রমী এ ঈদ বাজারের আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল ১০টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুলমাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্নআয়ের তিন শতাধিক পরিবারকে ১ কেজি গরুর মাংস, ১ কেজি পোলাও চাল ও এক প্যাকেট মাংসের মসলা বিক্রি করা হয়।

১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস, পোলাও চাল ফ্রি

এমন আয়োজনে খুশি নিম্নআয়ের মানুষ। উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের শেফালি বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে অনেক গরুর জবাই হয়েছে। তা দেখে ছোট পোলায় বায়না ধরছে ঈদে গরুর মাংস খাবে। তিনদিন ধরে পোলারে বুঝাইতাছি আজ না কাল, কিন্তু গরুর মাংসতো সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি, কেমনে আনবো? ঈদের দিন পোলায় মন খারাপ করবো। সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। কিন্তু আল্লাহ ছোট বাচ্চাটার মনের ইচ্ছে পূরণ করছে। তাইতো হঠাৎ করে এত কম টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনতে পারলাম।’

কামারখাড়া এলাকার জয়মালা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কোরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস দেখি না। কোরবানি আইলে মানুষ গরুর মাংস দেয়। বছরের ওই ঈদেই শুধু গরুর মাংস খাই। রোজার ঈদে গরুর মাংস আর পোলাও চাল খাইতে পারমু তা কখনো ভাবতে পারিনি। এর আগেও এখান থেকে ১০ টাকায় ইফতারির তেল-খেজুরসহ ৭-৮ প্রকার খাওন কিনে নিছি।’

১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস, পোলাও চাল ফ্রি

বাজারে পাহারাদারের কাজ করেন শিলই গ্রামের মারফত আলী (৬০)। মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন পান। এ দিয়েই কোনোমতে তার সংসার চলে। সেখানে গরুর মাংস কেনা তার জন্য স্বপ্ন।

মারফত আলী বলেন, ‘অভাবের সংসারে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনবো ভাবতেও ভয় লাগে। গতকাল বাজারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরু জবাই করা দেখলাম। মনে চায় একটু মাংস দিয়ে ভাত খাই কিন্তু সাহসে কুলায় না। রাতে যখন জানতে পারি এখানে ১০ টাকায় গরুর মাংস দিবো, তখনই নিয়ত করছি যেভাবেই হোক মাংস কিনবো। তাই ঈদের নামাজ পড়ে দেরি করি নাই। সঙ্গে সঙ্গে চলে আসছি এখানে।’

১০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস, পোলাও চাল ফ্রি

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ঈদের দিন তিন শতাধিক পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি জানান, সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে এ আয়োজন করা হয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। এত টাকা দিয়ে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে মাংস কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি।

এর আগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজার আয়োজন করে সংগঠনটি।

আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।