‘ঘটনা আদালত বা সাংবাদিকদের জানানো যাবে না’ মুচলেকায় শর্ত পুলিশের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ০৬ মে ২০২২
ভেঙে দেওয়া বিরোধীয় প্রাচীর, ইনসেটে মুচলেকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও টিনের বেড়া ভেঙে দেওয়ার পরও অঙ্গীকারের বেড়াজালে কোথাও অভিযোগ করতে পারছেন না এক প্রবাসী। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো থানা, আদালতে কিংবা সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করা যাবে না মর্মে মুচলেকা নিয়েছে পুলিশ। ঈদের আগের দিন এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী ইকবাল হোসেন বেলাল আখাউড়া উপজেলা সদরের রাধানগর এলাকার মৃত আবু ছায়েদের ছেলে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী। বর্তমানে ছুটিতে দেশে অবস্থান করছেন।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলালের সঙ্গে জায়গা নিয়ে প্রতিবেশী মৃত রাখাল চন্দ্র বণিকের ছেলে শিপন চন্দ্র বণিকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। এ বিরোধের জেরে গত ২ মে ভোরে শিপন বণিক ও তার সহযোগীরা বেলালের বাড়ির পাকা সীমানা প্রাচীর ও টিনের বেড়া ভেঙে জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনা জানানো হলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে শিপন বণিকসহ পাঁচজনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।

আটকদের শনাক্ত করার কথা বলে বেলালকে থানায় ডাকা হয়। পরে বেলালসহ তিনজন থানায় গেলে তাদেরও আটক করে আদালতে চালান করে দেওয়ার ভয় দেখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার। পরে জায়গা নিয়ে চলমান বিরোধ স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে মীমাংসা করা, সালিশের আগ পর্যন্ত আর কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হওয়া এবং ভাঙচুরের ঘটনায় থানা, আদালত, মিডিয়া বা কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে উভয় পক্ষকে ছেড়ে দেন পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

Police-(3).jpg

মুচলেকার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ইকবাল হোসেন বেলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিপন জোর করে আমার বাড়ির জায়গা দখলে নিতে চান। ওইদিন (২ মে) ভোরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবলসহ আমার বাড়িতে এসে হামলা করেন। আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে বাড়ির উঠানে ঘর তৈরির চেষ্টা করেন। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে তাদের আটক করে নিয়ে যায়। পরে উল্টো আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে আটকে রাখে।’

তিনি বলেন, ‘শিপনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এরপর বলা হয় দুইপক্ষকে আদালতে চালান করবে। পরে আমাদের দুই পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বিকেল ৩টার দিকে ছেড়ে দেয়।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে শিপন চন্দ্র বণিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো পক্ষই সালিশের সিদ্ধান্তের বাইরে থানায়, আদালত, মিডিয়া বা অন্য কোনো সংস্থায় অভিযোগ করতে পারবে না মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়। ওই সময় ওসি তদন্ত ছাড়া অন্য কোনো পুলিশ সদস্য ছিল না। বিষয়টি একদিনের মধ্যে মীমাংসা করার কথা ছিল। কিন্তু পৌরসভার মেয়র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব থাকায় তিনি ফেরার পর আমাদের বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠক হবে। ওই সালিশে আমি আমার বিরুদ্ধে আনা জায়গা দখলের অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবো।’

Police

কারও কাছে অভিযোগ না করার মুচলেকা নেওয়ার বিষয়ে আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকরা এসে পুলিশের কাছে ২৪ ঘণ্টার সময় চান যে তারা স্থানীয়ভাবে এটি মীমাংসা করবেন। সাংবাদিক বা অন্য কারও কাছে অভিযোগ করা যাবে না এমন কথা আমরা কেন বলতে যাবো? থানায়তো সাংবাদিকরাও এসেছিলেন। এছাড়া জমি-সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, দুই পক্ষই মারামারি করেছিল। তারা যেন আবার মারামারি বা বিশৃঙ্খলা না করেন, সেজন্য মুচলেকা নেওয়া হয়।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

কোথাও কোনো অভিযোগ করা যাবে না—পুলিশ এ মর্মে মুচলেকা নিতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুচলেকায় কী লেখা আছে সেটি আমি না দেখে বলতে পারবো না। তবে যদি কারও কাছে কোনো অভিযোগ না করার কথা লেখা থাকে, তাহলে সেটি অবান্তর। উনি চাইলে জাতিসংঘে গিয়ে অভিযোগ করুক, সমস্যা কী?’

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।