টাকার অভাবে ভাঙা পা থেকে রড বের করতে পারছেন না ইউসুফ

আহসানুর রহমান রাজিব
আহসানুর রহমান রাজিব আহসানুর রহমান রাজিব , সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ৩১ মে ২০২২
টাকার অভাবে পায়ে ১৭টি রড বয়ে বেড়াচ্ছেন মোহাম্মদ ইউসুফ

গত বছর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার গুরুতর আহত হন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ (২০)। ওই সময় তার বাম পা ভেঙে যায়। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন ইউসুফকে সুস্থ করতে হলে তার পা কেটে বাদ দেওয়া লাগবে। অন্যথায় ভাঙা স্থানে ইনফেকশন হয়ে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

তবে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পা কাটতে দেননি মা সালমা খাতুন। ছেলের পা কাটা ব্যতীত চিকিৎসার মাধ্যমে ইউসুফকে সুস্থ করতে সাতক্ষীরা-খুলনা-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। অনেক হাসপাতাল ইউসুফের অবস্থা দেখে তার পা কাটা ব্যতীত চিকিৎসা করতেই রাজি হয়নি।

একপর্যায়ে মায়ের অনুরোধে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউসুফের পায়ের অপারেশন করে। ওই সময় ডাক্তাররা ইউসুফের ভাঙা পায়ে ১৭টি রড ঢুকিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। কথা ছিল ছয় মাস পর রডগুলো অপসারণ করার। কিন্তু সময় চলে গেলেও টাকার অভাবে ইউসুফের পা থেকে রড অপসারণ করতে পারছে না তার পরিবার।

দুই ভাইয়ের মধ্যে ইউসুফ বড়। ২০১০ সালে বন্যার কবলে নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নেন খানপুর গ্রামে নানা আব্দুল গফুর সরদারের বাড়িতে। সেই থেকে নানার দেওয়া ৬ শতক জমির ওপর কোনো রকম একটি ঘর তৈরি করে সেখানেই বসবাস করতেন ইউসুফসহ তার পরিবারের সদস্যরা।

টাকার অভাবে ভাঙা পা থেকে রড বের করতে পারছেন না ইউসুফ

২০২১ সালে ইউসুফ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তখনই তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। তবুও সন্তানকে বাঁচাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য চেয়ে বেড়াচ্ছেন গর্ভধারিণী মা সালমা খাতুন ও বাবা রবিউল ইসলাম।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ ইউসুফ জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ের হাঁড় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন পা কেটে বাদ দিতে হবে। না হলে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তবে বাবা-মায়ের অবর্তমানে আমার ভবিষ্যৎ কী হবে এই ভেবে তারা ডাক্তারদের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করে, যাতে আমার পা কাটা ব্যতীত তারা চিকিৎসাসেবা দেন। একপর্যায়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তাররা পায়ের অপারেশন করেন। সেই সময় ভাঙা পায়ে ১৭টি রড ঢুকিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়। ছয় মাস পর রডগুলো অপসারণ করার কথা থাকলেও টাকার অভাবে পা থেকে রডগুলো অপসারণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি আমার পরিবারের পক্ষে। ফলে ভাঙা পায়ে ১৭টি রড বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

টাকার অভাবে ভাঙা পা থেকে রড বের করতে পারছেন না ইউসুফ

তিনি বলেন, রড নিয়ে না পারি বসতে, না পারি শুয়ে থাকতে। তার ওপর নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে অর্থাভাবে পায়ের রড বের করতে না পারায় ডাক্তার জানিয়েছেন হাঁটাচলা করতে। অন্যথায় পায়ে আরও সমস্যা হবে।

আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলেন, বেশিক্ষণ হাঁটতে পারি না। হাঁটলে পায়ের ক্ষত দিয়ে রক্ত বের হয়। তার ওপর পায়ের ঘা এখনো শুকায়নি। এতে ক্ষতস্থানে রস জমে পচা গন্ধের সৃষ্টি হয়। তবে আপনারা যদি আমার চিকিৎসায় পাশে দাঁড়াতেন তাহলে এই কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পেতাম।

টাকার অভাবে ভাঙা পা থেকে রড বের করতে পারছেন না ইউসুফ

ইউসুফের মা সালমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, এভাবে যদি বেশি দিন থাকে তাহলে ইউসুফের পায়ে ইনফেকশন হয়ে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তারপর পা কেটে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেশের কত বিত্তবান ব্যক্তি আছেন যারা এমন ক্ষেত্রে সাহায্য করে চলেছেন গরিব-দুস্থদের। তাই বিনীত আবেদন আমার এই অসহায় জীবনে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।