বন ও বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বন্দ্বে ১৭ দিন বিদ্যুৎহীন ১০০ পরিবার
১৭ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মধুপুর হিল রিজার্ভ ফরেস্টের ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১০০ পরিবার। কবে তাদের ঘরে আলো জ্বলবে, সেটিও জানা নেই কারও। বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বন্দ্বের কারণে তাদের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আইন নেই। তাই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, নিজেদের কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য বন বিভাগের এ মামলা। মামলার কারণেই তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবে বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, পুটিজুড়ি বন বিটের মধুপুর হিল রিজার্ভ ফরেস্টের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কালিগজিয়া। সেখানে দুই টিলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩০০ পরিবারের বসবাস। ২০১৮ সালের শেষ দিকে কালিগজিয়ার একটি টিলার ১০০ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশেই সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর ২০২০ সালে পুটিজুড়ি বন বিট অফিসও বিদ্যুতের সংযোগ নেয়। ২০২১ সালের প্রথম দিকে ওই এলাকার অন্য টিলাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করলে বন বিভাগ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুটিজুড়ি বন বিটের তৎকালীন কর্মকর্তা জুয়েল রানা পল্লী বিদ্যুতের বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহীদ উল্লাহসহ তিনজনের নামে হবিগঞ্জ বন আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় বনের প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘদিন মামলার অগ্রগতি না থাকলেও চলতি বছরের ২৬ মে আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশের পর ২৫ মে বিদ্যুৎ বিভাগ ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে নানারকম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই ১০০ পরিবারের সদস্যরা।

ওই এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী পায়েল দেববর্মা পরীক্ষায় বসছে আগামী ১৯ জুন। সে বলে, এ গ্রাম থেকে আমরা ১২ জন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবো। বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছি না। কিছুদিন পর পরীক্ষা। যদি দ্রুত বিদ্যুৎ না আসে, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।
কালিগজিয়া আদিবাসী মহিলা সমিতির সভাপতি স্বপ্না দেববর্মা বলেন, বিদ্যুৎ আসার পর হারিকেনসহ এ ধরনের যেসব জিনিসপত্র ছিল সব ফেলে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা মোমবাতি দিয়ে চলি। তা ছাড়া রাতে অন্ধকারে বন্য প্রাণীরাও আমাদের বাড়িঘরে হামলা করছে।
পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের বাহুবল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শহীদ উল্লাহ বলেন, যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় তখন বন বিভাগ বাধা দেয়নি। এমনকী তারা নিজেরাও একটি সংযোগ নিয়েছে। পরে দুই নম্বর টিলায় সংযোগ দিতে গেলে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই মামলা করেছে। তবে কী সে স্বার্থ, সেটি জানা নেই।
তিনি বলেন, বন বিভাগ আমাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। সরকারি দপ্তরের কোনো মামলায় নাম দেওয়ার কথা না। এতেই বোঝা যায় তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

পুটিজুড়ি বিট কর্মকর্তা রতীন্দ্র কিশোর রায় বলেন, আমার আগের কর্মকর্তা মামলাটি করেছিলেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নিয়ম নেই বলেই তিনি মামলাটি করেছেন। তবে এ বিষয়ে আগের কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, সামনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এ অবস্থায় ১০০টি পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তারা বেশ বিপাকে পড়েছেন। এতদিন বিদ্যুৎ ছিল এখন নেই, এটি অনেকটা অমানবিক হয়ে যায়।
তিনি বলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে তাই সেটির সমাধান আমি আসলে দিতে পারবো না। এটি আদালতের সিদ্ধান্ত। তবে আমি সবগুলো পক্ষকে নিয়েই একাধিকবার বসেছি। বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছি, মানবিক দিক বিবেচনায় তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেন কি না। আমার দিক থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু যেহেতু মামলা হয়েছে তাই বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ দিলে কোনো ঝামেলায় পড়ে কি না সেজন্য তারা এগুচ্ছেনা। তবুও আমার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এমআরআর/এএসএম