সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে বিয়াই বাড়ির রাস্তা নির্মাণ!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ১৬ জুন ২০২২

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চল্লিশ দিনের কর্মসূচির নারী শ্রমিকদের দিয়ে বিয়াই বাড়ির রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের দাবি চেয়ারম্যানকে জানিয়েই তিনি এই কাজ করেছেন। তবে চেয়ারম্যান বলছেন তিনি কিছুই জানেন না।

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) শ্রমিকদের দিয়ে বিয়াই বাড়ির রাস্তা নির্মাণের এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় ২০২১-২২ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে মানিকনগর ডিসি রাস্তা থেকে ইছামতি নদীর পাড়ে তোতা মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এবং মান্নানের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজ পান। চল্লিশ দিনের এই কর্মসূচি প্রকল্পের জন্য ৪৮ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।

jagonews24

কিন্তু ইউপি সদস্য ছকেল বিশ্বাস প্রকল্পের কাজের পাশাপাশি শ্রমিকদের দিয়ে বকচর গ্রামের আজমত বিশ্বাসের বাড়ি যাওয়ার ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করে দেন। আজমত বিশ্বাসের বড় ছেলের সঙ্গে ইউপি সদস্য ছকেল বিশ্বাসের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এরই সূত্র ধরে সরকারি প্রকল্পের জন্য নিয়োগকৃত শ্রমিক দিয়ে তিনি বিয়াই বাড়ি যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ করে দেন। রাস্তা নির্মাণে সময় লাগে ৫ দিন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, এলাকায় আরও অনেক রাস্তা ঘাট ভাঙাচোরা রয়েছে। জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য নতুন নতুন রাস্তা প্রয়োজন। সেগুলো মেরামত কিংবা নির্মাণ না করে ইউপি সদস্য সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে তার বিয়াই বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করে দিলেন। জনগুরুত্বের চেয়ে তিনি তার আত্বীয়তাকে গুরুত্ব দিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

ইউপি সদস্যের বিয়াই আজমত বিশ্বাস রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তার বড় ছেলের সঙ্গে ইউপি সদস্যের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৭-৮ জন নারী শ্রমিক তিনদিন কাজ করে রাস্তাটি নির্মাণ করে দেন। তবে শ্রমিকরা সরকারি প্রকল্পের কিনা তা তিনি জানেন না।

নারী শ্রমিক বাছিয়া বেগম জানান, মেম্বারের বিয়াই আজমত বিশ্বাসের বাড়ির রাস্তা নির্মাণের জন্য ৮ জন শ্রমিক টানা চারদিন এবং একদিন ১৮ জন কাজ করেন। এ কাজের জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা পয়সা পাননি তারা।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বলেই লোক নিয়ে তিনি বিয়াই বাড়ির রাস্তার কাজ করেছেন।’

jagonews24

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। যদি মেম্বার বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তার কাজটি করে থাকেন তাহলে সেটি অন্যায় করেছেন। এটা যদি বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা না হয়ে এলাকার সকল জনগণের উপকারার্থে করত, তাহলে ঠিক ছিল। এ বিষয়ে আমি মেম্বারের সঙ্গে কথা বলব।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানিকুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের তালিকানুযায়ী কাজগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা আগে তদন্ত করে দেখা হবে। সেইসঙ্গে প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা মেরামতের বিষয়েও খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।